বিপদে ধৈর্য্যধারণ (পর্ব:৩)



# রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আদর্শ পূর্বসূরীদের জীবন চরিত পর্যালোচনা
পরকালে বিশ্বাসী আল্লাহ ভীরু গোটা মুসলিম জাতির আদর্শ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আল্লাহ তাআলা বলেন :


“অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।” [সূরা আহযাব : ২১]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সীরাত চিন্তাশীল, গবেষকদের উপজীব্য ও শান্তনার বস্তু। তার পূর্ণ জীবনটাই ধৈর্য ও ত্যাগের দীপ্ত উপমা। লক্ষ্য করুন, স্বল্প সময়ে মধ্যে চাচা আবু তালিব, যিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কাফেরদের অত্যাচার প্রতিহত করতেন; একমাত্র বিশ্বস্ত সহধর্মিনী খাদিজা; কয়েকজন ঔরসজাত মেয়ে এবং ছেলে ইব্রাহিম ইন্তেকাল করেন। চক্ষুযুগল অশ্রসিক্ত, হৃদয় ভারাক্রান্ত, স্মায়ুতন্ত্র ও অস্থিমজ্জা নিশ্চল নির্বাক। এর পরেও প্রভুর ভক্তিমাখা উক্তি


“চোখঅশ্রুসিক্ত, অন্তর ব্যথিত, তবুও তা-ই মুখে উচ্চারণ করব, যাতে প্রভু সন্তুষ্ট, হে ইব্রাহিম! তোমার বিরহে আমরা গভীর মর্মাহত।” [বুখারী : ১৩০৩]
আরো অনেক আত্মোৎর্সগকারী সাহাবায়ে কেরাম মারা যান, যাদের তিনি ভালবাতেন, যারা তার জন্য উৎসর্গ ছিলেন। এত সব দুঃখ-বেদনা তার শক্তিতে প্রভাব ফেলতে পারেনি। ধৈর্য-অভিপ্রায়গুলো ম্লান করতে পারেনি।
তদ্রুপ যে আদর্শবান পূর্বসুরীগণের জীবন চরিত পর্যালোচনা করবে, তাদের কর্মকুশলতায় অবগাহন করবে, সে সহসাই অবলোকন করবে, তারা বিবিধ কল্যাণ ও উচ্চ মর্যাদার অধিকারী একমাত্র ধৈর্যের সিঁড়ি বেয়েই হয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন :

“নিশ্চয় তোমাদের জন্য তাদের মধ্যে (ইবরাহীম আ. ও তাঁর অনুসারীদের মধ্যে) উত্তম আদর্শ রয়েছে, যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রত্যাশা করে, আর যে মুখ ফিরিয়ে নেয়, (সে জেনে রাখুক) নিশ্চয় আল্লাহ তো অভাবমুক্ত, সপ্রশংসিত।” [সূরা মুমতাহিনা : ৬]
উরওয়া ইবনে জুবায়েরের ঘটনা, আল্লাহ তাআলা তাকে এক জায়গাতে, এক সাথে দুটি মুসিবত দিয়েছেন। পা কাটা এবং সন্তানের মৃত্যু। তা সত্ত্বেও তিনি শুধু এতটুকু বলেছেন, “হে আল্লাহ! আমার সাতটি ছেলে ছিল, একটি নিয়েছেন, ছয়টি অবশিষ্ট রেখেছেন। চারটি অঙ্গ ছিল একটি নিয়েছেন, তিনটি নিরাপদ রেখেছেন। মুসিবত দিয়েছেন, নেয়ামতও প্রদান করেছেন। দিয়েছেন আপনি, নিয়েছেনও আপনি।”
উমর ইবনে আব্দুল আজিজ এর একজন ছেলের ইন্তেকাল হয়। তিনি তার দাফন সেরে কবরের পাশে সোজা দাঁড়িয়ে, লোকজন চারপাশ দিয়ে তাকে ঘিরে আছে, তিনি বলেন, “হে বৎস! তোমার প্রতি আল্লাহ রহমত বর্ষণ করুন। অবশ্যই তুমি তোমার পিতার অনুগত ছিলে। আল্লাহর শপথ! যখন থেকে আল্লাহ তোমাকে দান করেছেন, আমি তোমার প্রতি সন্তুষ্টই ছিলাম। তবে আল্লাহর শপথ করে বলছি, তোমাকে এখানে অর্থাৎ আল্লাহর নির্ধারিত স্থান কবরে দাফন করে আগেরচে’ বেশি আনন্দিত। আল্লাহর কাছে তোমার বিনিময়ে আমি অধিক প্রতিদানের আশাবাদী।
Leave a Comment