Archive for November 2011

আইনস্টাইনের চোখে ধর্ম এবং বিজ্ঞান

আমাদের দেশে শিক্ষার কাছ থেকে বিজ্ঞানকে দূরে ঠেলে রাখার এক আত্মঘাতী প্রবণতা দেখা দিচ্ছে। দেশে এমনিতেই শিক্ষার হার কম। তার উপর বিজ্ঞান শিক্ষা দিন দিন কমতে কমতে একেবারে তলানীতে এসে ঠেকেছে। শহর কেন্দ্রিক মুষ্টিমেয় কিছু ধনী শিক্ষার্থী ছাড়া বিজ্ঞান নিয়ে কেউ পড়তে চায় না। আর এই ধনীদের বিজ্ঞান পড়ার উদ্দেশ্য ইঞ্জিনিয়ার-ডাক্তার হওয়া। কেউ বিজ্ঞানী হওয়ার জন্য বিজ্ঞান পড়ে না।

বিজ্ঞান শিক্ষায় পিছিয়ে থাকলে কি হবে। ধর্ম শিক্ষায় আমরা প্রাণপাত করে ফেলি। ধর্ম শিক্ষায় শিক্ষিত করে একজন শিক্ষার্থীকে গোঁড়া ধার্মিক বানিয়ে ফেলার চেষ্টা হাতে নেই। মসজিদ মাদ্রাসা নির্মাণে আমরা যে ব্যয় করি তার কানাকড়িও বিজ্ঞানাগার বা গবেষণাগার নির্মাণে ব্যয় করি না। বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য তো নয়ই। ধর্ম শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নীতি-নৈতিকতা শিক্ষা করা। ধর্ম শিক্ষায়ও বিজ্ঞানকে আনতে হবে। নিদেনপক্ষে বিজ্ঞানের মৌলিক বিষয়গুলি সবাইকে পাঠদানের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
সোয়াব কামানো কিংবা নাম কামানোর উদ্দেশ্যে ফ্রি এতিমখানা, ফ্রি মাদ্রাসা, ফ্রি মসজিদ করে সারা বাংলাদেশ সয়লাব করে দেই কিন্তু একটি ফ্রি বিজ্ঞান স্কুল করতে পারি না। আমার মতে বিজ্ঞান শিক্ষাকে একদম ফ্রি করে দেওয়া উচিত। বাংলাদেশের এক কোটি মাধ্যমিক শিক্ষার্থী যদি বিজ্ঞান গ্রুপে ভর্তি হতে চায় প্রত্যেককে ফ্রি পড়াতে হবে। এটা সরকারের দায়িত্ব। প্রতিটি স্কুলে যারা বিজ্ঞান পড়তে চায় তাদের ভর্তুকি দিয়ে পড়িয়ে বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গড়ে তোলার দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।
ভূমিকাটি বেশি দীর্ঘ করব না। আজ আমি বিজ্ঞানের এমন একটি সূত্রের কথা বলব যা দ্বারা এ বিশ্ব নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে।
সূত্রটি এই-
E = mc2
(ই ইকুয়াল টু এমসি স্কয়ার)
এখানে E = Energy
m = mass
c২ = Square time of velocity.
আলোর বর্গের গতিতে কোন বস্তু গতিলাভ করলে সে নিজেই একটি শক্তিতে পরিণত হয়। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ আলোর গতিতে কোন বস্তু ছুটতে পারবে বলে প্রমাণিত হয়েছে।
আমি কর্পোরেট দৃষ্টিকোণ থেকে বলি-
E = Energy
m = money
c2 = Square time of corporate world.
এবার বিশ্লেষণে আসি। বর্তমান বিশ্বে শক্তি হচ্ছে পুঁজিবাদ। পুঁজিবাদী ব্যক্তি এবং রাষ্ট্র মানেই শক্তি।
এই শক্তি অর্জন করতে হলে দরকার মানি বা অর্থ। ছলে বলে কৌশলে এই অর্থ অর্জন করতে হবে।
আর সি বা কর্পোরেট ওয়ার্ল্ড হচ্ছে এই পুঁজির নিয়ন্ত্রণকারী। বর্তমান বিশ্বে দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে কর্পোরেট জগত আগ্রাসী তৎপরতা চালাচ্ছে।
আমি শিক্ষার ক্ষেত্রে সূত্রটিকে একটু ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করি-
E = Education
m = manpower
c2 = square time of computer education
শিক্ষাকে যদি একটি বড় শক্তি ধরি তাহলে আমাদের দেশের পুরো জনগোষ্ঠীকে তথ্যপ্রযুক্তির শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে। ভবিষ্যতের দুনিয়া হবে তথ্যসমৃদ্ধ দুনিয়া। এই তথ্য শক্তির সাথে পারমাণবিক শক্তির ক্ষমতা পরাজিত হবে। ভবিষ্যতের যুদ্ধ হবে তথ্যযুদ্ধ।
ধরা যাক আমেরিকা পারমাণবিক বোমার ভয় দেখিয়ে বিশ্বে যা ইচ্ছা তাই করে যাচ্ছে। এই বোমার ভয়ে বিশ্বের তাবৎ তাবৎ ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো আমেরিকাকে ভয় করে চলছে। এই পারমাণবিক বোমাটি আর কিছুই নয়। ই ইকুয়ালটু এমসি স্কয়ারের কারসাজি। এই সূত্র দ্বারা আবিষ্কৃত শক্তির ভয়েই বিশ্ব কুপোকাৎ। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা এই সূত্রটি বাস্তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ৯৯.৯৯৯৯৯৯৯৩% সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। লক্ষ্য করুন এখানে কিন্তু ১০০% বলা হয়নি। আরও ০.০০০০০০০০৭% সম্ভাবনা থেকে যায়। আর মহাবিশ্বের কাছে এই রহস্যটুকুই সর্বশক্তিমান। মানুষ সেই সর্বশক্তিমান রহস্যটুকুকেই আয়ত্ত্ব করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মানুষ যখন এই রহস্যটুকু বের করে ফেলতে পারবে তারপরে কি হবে আমি দিব্যি অনুভব করতে পারছি। এটি বেশি কিছু নয়। আলোর গতিতে চড়ুই পাখির মত এদিক সেদিক ফুরুৎ উড়াল দেবে। তবে এই শক্তিটি থাকবে মুষ্টিমেয় কয়েকজন শক্তিশালী মানুষের হাতে।
ও হ্যাঁ, বলছিলাম পারমাণবিক বোমার কথা। আমেরিকা বোমা বানিয়ে সেই বোমা হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে নিখুঁতভাবে ছুঁড়ে মারার জন্য প্রোগ্রাম সাজিয়ে বসে আছে। ক্ষেপণাস্ত্র বানাচ্ছে কত দ্রুত সেই বোমা লক্ষ্যস্থলে আঘাত হানতে পারবে। আলোর গতি সেকেন্ডে ৩ লক্ষ কিলোমিটার। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ গতির ক্ষেপণাস্ত্র সেকেন্ডে কয়েক হাজার কিলোমিটার হতে পারে।
ধরা যাক ২০৩৪ সালে কোন কারণে বাংলাদেশের সাথে আমেরিকার যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে। আমেরিকা সিদ্ধান্ত নিয়েছে নাহ্ এই সমস্ত তেলাপোকাসম দেশগুলোকে দুনিয়ার বুকে রেখে লাভ নেই। হিরোশিমা-নাগাসাকির মত একেবারেই উড়িয়ে দেই না কেন! পারমাণবিক বোমার আঘাতে মানুষগুলো স্রেফ কর্পূরের মত উবে যাবে। মাটিচাপা দেওয়ার ও কোন ঝামেলা থাকবে না।
যেই ভাবা সেই কাজ। সেকেন্ডে ১০০০ কিলোমিটার বেগে একটি ক্ষেপণাস্ত্রের আগায় করে পারমাণবিক বোমাটি ধেয়ে আসছে। কয়েক সেকেন্ড মাত্র। এই কয়েক সেকেন্ডই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সময়ের হিসেবে অনন্তকাল হতে পারে যদি এর চেয়েও অধিক গতি নিয়ে সেই ক্ষেপণাস্ত্রটির উপর ঝাঁপিয়ে পরা যায়। মাঝপথে ক্ষেপণাস্ত্রকে থামিয়ে সোজা আমেরিকার ঘরেই ফেরত পাঠানো যায়। কিংবা নিষ্ক্রিয় করে বগলদাবা করে নিজের ঘরে নিয়ে আসা যায়। প্রয়োজন আরেকটি উন্নত প্রোগ্রামিং। এবং এটি শুধু জ্ঞানের মাধ্যমেই সম্ভব। সুতরাং অপশক্তিকে রুখতে জ্ঞানের শক্তিই যথেষ্ঠ।
এ সব কিছুই ঘটতে পারে যদি গতিকে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলা যায়। এর জন্য দরকার বিজ্ঞান চর্চা। আর যে কোন চর্চা মানেই শিক্ষা। গোঁড়ামি করে ধর্ম আঁকড়ে থাকার মানে হচ্ছে জনগণকে ঠুলি পড়িয়ে বসিয়ে রাখা। ধর্মকে হাতিয়ার বানিয়ে শোষণ করাটাও সহজ। বিজ্ঞানী আইনস্টাইন ধর্ম এবং শিক্ষা নিয়ে কিছু মূল্যবান কথা বলেছেন। আইনস্টাইনের জীবনী থেকে কিছু কথা তুলে দিলাম।
"মানুষের ব্যাক্তিগত ঈশ্বর ভাবনায় তাঁর আস্থা ছিল না। তিনি নিজেই বলেছেন যদি তাঁর মধ্যে ধর্মানুভূতি বলে কিছু থেকে থাকে তবে তা শুধু- অসীম শ্রদ্ধাবোধ সেই বিজ্ঞানের জন্য যা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে নিরন্তর চেষ্টা চালাচ্ছে। ধর্ম, বিধাতাপুরুষ, পরকাল এসব নিয়ে তিনি নিজের মুখেই বলেছেন, মৃত্যুর পর শাস্তির ভয়ে মানুষ জীবিত অবস্থায় পাপ করা থেকে বিরত থাকবে এটা তিনি আশা করেন না। তাঁর কাছে এধরনের যুক্তির কোন মূল্য নেই। মানুষকে সুপথে রাখতে পারে আইনস্টাইনের ভাষায় সেই মানবিক মূল্যবোধ যা তাঁর হূদয়ে প্রতিনিয়ত উচ্চারিত হয় এমনভাবে- তোমার সম্পূর্ণ অস্তিত্বের মূলে রয়েছে অপরের ঘাম ঝরা কঠোর পরিশ্রম। হাজারো জীবিত আর মৃত মানুষের কর্মের সুফল তুমি- মানুষ আজ প্রতিনিয়ত ভোগ করছ। শিক্ষাই শুধুমাত্র মানুষের মধ্যে এই দায়িত্ববোধের উপলব্ধি এনে দিতে পারে। ধর্ম বা মৃত্যুভয় নয়।
লিখেছেন :
সংগ্রহ:
সবটুকু একত্রে পড়ুন "আইনস্টাইনের চোখে ধর্ম এবং বিজ্ঞান"

লিও টলস্টয়ের দৃষ্টিতে শ্রেষ্ঠ ধর্ম




প্রখ্যাত রুশ সাহিত্যিক ও চিন্তাবিদ লিও টলস্টয় মারা গেছেন ১০১ বছর আগে
১৯১০ সালের ২০ নভেম্বর। "ওয়ার এন্ড পিস" বা "যুদ্ধ ও শান্তি" শীর্ষক
উপন্যাস লিও টলস্টয়কে বিশ্বজোড়া খ্যাতি এনে দেয়। কিন্তু খৃস্ট ধর্মের নামে
 প্রচলিত নানা দিকের সমালোচনা করায় ১৯০১ সালে রাশিয়ার অর্থডক্স গীর্যা
 টলস্টয়কে সমাজচ্যুত বলে ঘোষণা করে এবং এখনও তার বিরুদ্ধে ওই
 ঘোষণা ফিরিয়ে নেয়নি। অন্যদিকে টলস্টয় ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে ভালো
 ধারণা পোষণ করতেন এবং এমনকি তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন বলেও
 শোনা যায়।
সম্প্রতি "মুহাম্মাদ রসুলাল্লাহ (সাঃ)" শীর্ষক একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। এ বইয়ের অংশ বিশেষে লিও টলস্টয়ের অনুদিত বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ মোস্তফা (সাঃ)'র কিছু বক্তব্যের অনুবাদ স্থান পেয়েছে। এ বইয়ের ভূমিকায় জনাব ইব্রাহিমী রাদ লিখেছেন, ''' গত বছর আংকারায় তুর্কীভাষী লেখক ও কবিদের এক সমাবেশে শুনতে পাই যে টলস্টয় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। কথাটা শুনে বিশ্বাস করতে পারিনি। তবে এ নিয়ে গবেষণা ও অনুসন্ধান চালানোর পর "টলস্টয়ের হারানো চিঠি" শীর্ষক একটি বই আমাকে দেখানো হয়।''
এ বইয়ে কয়েকটি চিঠি যুক্ত রয়েছে। এইসব চিঠি থেকে ইসলাম সম্পর্কে টলস্টয়ের দৃষ্টিভঙ্গি সুস্পষ্ট। কোনো একটি চিঠিতে একজন মা তার সন্তানের মুসলমান হয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে এ ব্যাপারে টলস্টয়ের পরামর্শ চেয়েছেন। তিন সন্তানের জননী ৫০ বছর বয়স্ক ইয়লনা ওকিলাভা টলস্টয়ের কাছে লিখেছেন, "আমার স্বামী মুসলমান। কিন্তু আমাদের সন্তান ছিল খৃস্টান। আমার কন্যার বয়স ১৩। এক পুত্রের বয়স ২৩। সে পিটার্সবার্গ টেকনোলজি ইনস্টিটিউটে পড়াশুনা করছে। আমার অন্য পুত্র ২২ বছর বয়স্ক। সে মস্কোর এলেক্সিও সামরিক কলেজে পড়াশুনা করছে। আমার ছেলেরা বাবার ধর্ম তথা ইসলাম গ্রহণ করতে চায়। তারা আমার অনুমতি চাইছে। আমি এখন কি করব? আমি জানি আমার পুত্রদের এই চিন্তা কোনো ছোটখাট কারণ বা পারিবারিক চিন্তা থেকে উৎসারিত হয়নি, অর্থ বা পদের লোভেও তাদের মধ্যে এ চিন্তার সূত্রপাত হয়নি। যেটা খুবই স্পষ্ট তা হল, ওরা ধর্মের বিষয়ে একটা পথ খুঁজে বেড়াচ্ছিল এবং এক্ষেত্রে ইসলামকে নিজ ধর্ম হিসেবে বেছে নিয়েছে ও মুসলমানদের সহযোগিতা করছে। আমি এমন একজন মা সন্তানদের প্রতি যার ভালবাসা কুলকিনারাহীন, এ মুহূর্তে আমার চোখ দু'টো অশ্রুসজল। আমি যেন ধীরে ধীরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছি এবং আপনার কাছে চিঠি লেখা ছাড়া আর কোনো পথ খুঁজে পাইনি। কেবল আপনিই আপনার জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দিয়ে এ সমস্যার সমাধান দেখাতে পারেন। আমাকে কিছু সান্ব্ নার বাণী দিয়ে প্রশান্ত করুন। বিশ্বাস করুন, একমাত্র সন্তানদের ভালবাসি বলেই আমি এ চিঠি লিখলাম আপনার কাছে।"
টলস্টয় উদ্বিগ্ন ওই মায়ের চিঠির উত্তরে লিখেছেন, '' আপনার ছেলেরা ধর্মকে এমন গুরুত্ব দেয়ায় এবং মানুষকে সাহায্য করছে বলে তাদের খুবই প্রশংসা করা ও ধন্যবাদ দেয়া জরুরি। এই মানবীয় আকাঙ্ক্ষা অব্যাহত রাখার জন্য ইসলাম ধর্মের দিকে তাদের ঝুঁকে পড়া ও মুহাম্মদের ধর্মের অনুসারী হওয়া তাদের জন্য খুবই জরুরি। অবশ্য যারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন, নিজ ধর্ম, ধর্মের বিধান ও ধর্ম সম্পর্কে জানার বিষয়গুলো অন্যদের কাছে তুলে ধরা তাদের দায়িত্ব। কিন্তু এ ব্যাপারে যেটা বলা দরকার: আপনার সন্তানরা তাদের আগের ধর্ম অর্থাৎ খৃস্ট ধর্ম ত্যাগ করেছে এবং মুসলমান হয়েছে। আর এ ব্যাপারে অন্যদের কাছে যুক্তি বা কারণগুলো তুলে ধরতে তারা বাধ্য নয় এবং তাদের এই যৌক্তিক ও ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা কেবল তাদের প্রভু ও তাদের নিজের মধ্যকার বিষয়। তাদের এই নির্বাচন সম্পর্কে মোটেই লজ্জিত হবেন না বা নিজেকে অপরাধী বলে মনে করবেন না। "
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। নিজের জ্ঞান বা প্রতিভা খাটিয়ে সে নিজের জীবনের পথ খুঁজে নিতে সক্ষম। তাই মানুষ সবার শ্রদ্ধা পাবার দাবি রাখে। আর এ জন্যই প্রত্যেক ঐশী ধর্ম মানুষ ও তার মর্যাদাকে গুরুত্ব দিয়েছে। মানবজাতিকে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের দিকে পরিচালিত করার ক্ষেত্রে ধর্মের ভূমিকা রয়েছে। কারণ, ধর্মগুলো নৈতিক ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধে সমৃদ্ধ। কিন্তু কোন ধর্মটি সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ ও অবিকৃত? লিও টলস্টয় তার চিঠিতে ইসলামের প্রশংসা করেছেন এবং তার মতে ইসলাম ধর্ম মানুষকে সম্মান ও মর্যাদার শীর্ষে নিতে সক্ষম ও এ ধর্মই মানুষকে সঠিক পথ দেখায়। এ প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, "ইসলাম ধর্ম ও নবী মুহাম্মদের শিক্ষা খৃস্ট ধর্মের তুলনায় অনেক উন্নত ও মূল্যবান এবং এ ধর্মের গুণও বেশি- যারা এ মত পোষণ করেন আমি সর্বান্তকরণে তাদের সাথে একমত। যারা এ ধর্মের সেবা করছেন আমি তাদের অভিনন্দন জানাই।"
লিও টলস্টয় ওই চিঠিতে আরো লিখেছেন, "এ মুহূর্তে যে এই কথাগুলো আপনাদের উদ্দেশ্যে লিখছে সে একজন খৃস্টান। আমি বহু বছর ধরে খৃস্ট ধর্মের শিক্ষার সাথে পরিচিত, কিন্তু আমি এটা স্বীকার করছি যে, ইসলাম ধর্ম ও নবী মুহাম্মদের শিক্ষার সবগুলো বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য খৃস্ট ধর্মের চেয়ে অনেক অনেক বেশি পূর্ণাঙ্গ ও মূল্যবান। আসলে ইসলাম ধর্মের বাহ্যিক দিকগুলোর সাথে খৃস্ট ধর্মের কোনো তুলনাই হয় না। যদি সব মানুষের জন্য ইসলাম ও খৃস্ট ধর্মের মধ্য থেকে যে কোনো একটিকে বেছে নেয়ার সুযোগ দেয়া হয় এবং ওই ধর্ম অনুযায়ী নিজ প্রভুর এবাদত বা উপাসনা করার সুযোগ থাকে, তাহলে প্রথমেই মানুষকে এটা দেখতে হবে যে, কয়েক খোদার উপাসনা একই সময়ে সম্ভব নয়। আর উপাসনা বা এবাদতের ক্ষেত্রে কয়েক খোদার উপাসনা একত্ববাদী ধর্মের পরিপন্থী। আর ইসলাম কেবল এক প্রভুর এবাদত করতে বলে, আর কারো নয়। এ কারণেই ইসলাম ধর্ম খৃস্ট ধর্মের চেয়ে উন্নত এবং সুস্থ বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন যে কোনো মানুষ অন্য কোনো ধর্মের দিকে না গিয়ে অবশ্যই ইসলামকেই বেছে নেবে। "
লিও টলস্টয় ওই চিঠিতে আরো লিখেছেন, " মানব সভ্যতা তার বিকাশের জন্য ধর্মের কাছে ঋণী। মুহাম্মদ রয়েছেন ইসলাম ধর্মের শীর্ষে। তার প্রচারিত শিক্ষাগুলোর মধ্যে সব ধর্মের মূল শিক্ষাগুলো রয়েছে এবং খৃস্ট ধর্মের অনেক বাস্তবতার সমান্তরালে ও কাছে রয়েছে সেসব শিক্ষা। কারণ, প্রভু বা স্রষ্টাই হচ্ছেন ধর্মগুলোর মূল ভিত্তি। ধর্মগুলো মানুষকে খোদায় বিশ্বাসী হতে উৎসাহ দেয়। আর যেই ধর্ম এই দায়িত্ব পালনে ও এই বাণী প্রচার ভালোভাবে সম্পন্ন করে সেই ধর্ম বেশি শ্রদ্ধাভাজন হবে, আর সেই ধর্মই হল ইসলাম।"
টলস্টয় তার এসব মতামত ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে প্রচারের অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি ধর্মের বাস্তবতাগুলোর প্রতি বিশ্বাস ও ধর্মের প্রতি বিশ্বাসকে মানুষের সবচেয়ে সুন্দর কাজ বলে অভিহিত করেছেন। নতুন প্রজন্ম যদি তাদের মানবীয় ও পারিবারিক দায়িত্বগুলোর মত নিজের দায়িত্বগুলো পালন করতে পারে তাহলে সমাজে শান্তি ফিরে আসবে বলে টলস্টয় মনে করেন।
বিশ্বনন্দিত রুশ চিন্তাবিদ ও সাহিত্যিক টলস্টয় ধর্মগুলোর বিচ্যুতি ও বিশেষ করে বিভ্রান্ত বাহাই মতবাদ সম্পর্কে লিখেছেন, "নতুন প্রজন্ম ধর্মগুলো ও বিশেষ করে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে কতটা জ্ঞান রাখে তা আমি জানি না। তারা বিভিন্ন সূত্র থেকে এ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারে, তবে এমন কিছু মতবাদ দেখা যায় যেগুলো ইসলামের নামে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। এসব মতবাদের মধ্যে বাহাই মতবাদ অন্যতম। ইসলামের নামে প্রথমে ইরানে এ মতবাদের সূচনা হয় এবং পরে এশিয়া মাইনরে এ মতবাদ কিছুটা জোরদার হয়েছে। বাহাইরা কাবা ঘরকে কেবলা মনে করে না, তারা বাহাউল্লাহর বাসস্থানকে কেবলা মনে করে। এদের চিন্তাভাবনা বিভ্রান্ত এবং কারো কাছেই এসব চিন্তাধারা গ্রহণযোগ্য হওয়া উচিত নয়। যদি আমার এসব মতামত অন্ততঃ ভুল চিন্তাধারাকে অগ্রাহ্য করার ক্ষেত্রে সহায়ক হয় তাহলে আমি খুশি হব।" 
সংগ্রহ: ইরান বাংলা রেডিও থেকে(bangla.irib.ir) religionshimmi.blogspot
সবটুকু একত্রে পড়ুন "লিও টলস্টয়ের দৃষ্টিতে শ্রেষ্ঠ ধর্ম"

গৌতম বুদ্ধের অষ্টমার্গের কথা


অষ্টমার্গপ্রথমঃ সত্য বোধ- অর্থাৎ মন থেকে সকল ভান্তি দূর করতে হবে । উপলব্ধি করতে হবে নিত্য ও অনিত্য বস্তুর মধ্যে প্রভেদ ।
দ্বিতীয়ঃ সংকল্প- সংসারের পার্থিব বন্ধন থেকে মুক্ত হবার আকাঙ্ক্ষা । যা কিছু পরম জ্ঞান তাকে উপলব্ধি করার জন্য থাকবে গভীর আত্ম সংযমের পথ ধরে এগিয়ে চলা ।
তৃতীয়ঃ সম্যক বা সত্য বাক্য । কোন মানুষের সাথেই মিখ্যা না বলা হয় । কাউকে গালিগালাজ বা খারাপ কথা বলা উচিত নয় । অন্য মানুষের সাথে যখন কথা বলবেতা যেন হয় সত্যপবিত্র আর করুণার পূর্ন ।

চতুর্থঃ সৎ আচরণ - সকল মানুষের উচিত ভোগবিলাস ত্যাগ করে সৎ জীবন যাপন করা । সমস্ত কাজের মধ্যেই যেন থাকে সংযম আর শৃঙ্খলা । এছাড়া অন্য মানুষের প্রতি আচরণে থাকবে দয়া ভালবাসা ।
পঞ্চমঃ সম্যক জীবিকা- অর্থাৎ সৎভাবে অর্থ উপার্জন করতে হবে এবং জীবন ধারনের প্রয়োজনে এমন পথ অবলম্বন করতে হবে যাতে রক্ষা পাবে পবিত্রতা ও সততা ।
ষষ্ঠঃ সৎ চেষ্টা- মন থেকে সকল রকম অশুভ ও অসৎ চিন্তা দূর করতে হবে-যদি কেউ আগের পাঁচটি পথ অনুসরণ করে তবে তার কর্ম ও চিন্তা স্বাভাবিকভাবেই সংযত হয়ে চলবে ।
সপ্তমঃ সম্যক ব্যায়াম অর্থাৎ সৎ চিন্তা - মানুষ এই সময় কেবল সৎ ও পবিত্র চিন্তা-ভাবনার দ্বারা মনকে পূর্ণ করে রাখবে ।
অষ্টমঃ এই স্তরে এসে মানুষ পরম শান্তি লাভ করবে । তার মন এক গভীর প্রশান্তির স্তরে উত্তীর্ন হবে ।
সবটুকু একত্রে পড়ুন "গৌতম বুদ্ধের অষ্টমার্গের কথা"

গৌতম বুদ্ধের বাণী


কিছু কথা মানুষের জীবনকে পাল্টে দিতে পারে, কিছু বাণী মানুষকে পরিপূর্ণ শুদ্ধ করে দিতে পারে, কিছু বাক্য অকাট্য সত্য হিসেবে চিরকাল ধাবিত হতে থাকে....এরকম হাজারো কথা, বাণী বা বাক্য রয়েছে শুধু মানুষকে মানুষ হিসেবে শুদ্ধ সুন্দর হিসেবে পৃথিবীর বুকে মাথা উচু করে দাঁড়ানোর জন্য। 
সত্য, সুন্দর পথে চলার জন্য যদি বাণী, কথা ও বাক্যগুলো যদি কাউকে ্প্রেরণা যোগায় তবেই পোস্টটি সার্থকথা খুঁজে পাবে......


 মানব জীবন বড়ই দুর্লভ। অনেক পূণ্য প্রভাবে আমরা এই মনুষ্যজন্ম লাভ করেছি। পশুপক্ষি, গরু,ছাগল কত প্রাণী এই দুনিয়ায় আছে। তাদের জ্ঞান শক্তি নেই। তারা উন্নত জীবন লাভ থেকে বঞ্চিত। তাদের সৎ কর্ম করার ক্ষেত্রও নেই।

মানুষের জ্ঞান চিন্তা শক্তি আছে। চিন্তা শক্তি দ্বারা মানুষ ভাল মন্দ বুঝতে পারে। সৎ চিন্তা দ্বারা মানুষ নৈতিক জীবন গঠন করতে পারে। বুদ্ধ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে মানব জীবনের নৈতিক উপদেশ প্রদান করেছেন।

নিম্নে কিছু উপদেশ সংক্ষেপে তুলে ধরছি...

1)
আত্ননির্ভরশীল হও। আত্নপ্রত্যয়ী হও। আত্নশরণই শ্রেষ্ট শরণ।

2)
দুষ্কর্ম পরিত্যাগ করে সৎ কর্ম সম্পাদন কর। কায়, বাক্য মনে সংযম হও। মন থেকেই সৎ কর্ম দুষ্কর্মের ইচ্ছশক্তি উতপন্ন হয়। প্রসন্ন মনে কথা বললে ছায়ায় ন্যায় সুখ প্রদান করে। দুষ্ট মনে কাজ করলে দুঃখ ভোগ করতে হয়।

3)
জীবে দয়া মহামৈত্রীই বুদ্ধদেশনার বৈশিষ্ট্য। মা যেমন তাঁর একমাত্র ছেলেকে প্রাণ দিয়ে রক্ষা করে। সেরুপ সকল প্রাণীর প্রতি অপ্রমেয় মৈত্রী পোষণ করবে। এটি মানসিক সৎ কর্ম।

4)
মিথ্যা, লাগানো কথ, কটুক্তি, ব্রিথাবাক্য বলা থেকে বিরত হও। সত্য, প্রিয়, মিষ্টি অর্থপূর্ণ বাক্য বল। এগুলো স্ম্যক বাক্যের অন্তর্গত।

5)
অস্ত্র, প্রাণী, মাংস, নেশা, বিষ- বাণিজ্য করবে না। এগুলো মিথ্যাজীবিকা। ধর্মের পরিপন্থী।

6)
হিংসা ত্যাগ করে সকলের প্রতি মমতাশীল হও। পরের দুঃখে দঃখী হও। পরের সুখে সুখী হও। দুঃখকে সমভাবে দেখ। চারটি যথাক্রমে মৈত্রী, করুণা, মুদিতা উপেক্ষা ভাবনা। যার নাম ব্রহ্মবিহার।

7)
মূর্খের সেবা করবে না। পণ্ডিতের সান্নিধ্যে যাবে। পূজনীয় ব্যক্তিকে পূজা করবে।

8)
মাতা পিতা, স্ত্রী পুত্রের ভরণপোষন করবে। সত্য বিষয়ে জ্ঞান লাভ করবে। বিবিধ শিল্প শিক্ষা করবে।

9)
ক্ষমাশীল, গুরুজনের আদেশ পালনে সুবাধ্যতা, শীলগুণসম্পন্ন ভিক্ষু - শ্রামণদের দর্শন ধর্মালোচনা করবে।

10)
পাপী বন্ধু নিক্রিষ্ট ব্যক্তির সংসর্গে থাকবে না। কল্যাণমিত্র প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিরদের সান্নিধ্যে থাকবে।

11)
দুশ্চরিত্র অসমাহিত চিত্তে শত বছর বেঁচে থাকার চেয়ে সতচরিত্র ধ্যানী ব্যক্তির একদিনের জীবনও শ্রেয়


12)    বর্ষাকালে এখানে, শীত-গ্রীষ্মে ওখানে বাস করবোমূর্খরা এভাবেই চিন্তা করে। শুধু জানে না জীবন কখন কোথায় শেষ হয়ে যাবে। [মগ্‌গবজ্ঞোঃ ২৮৬]
13)  
নিজেকে নিয়ন্ত্রণ কর। তারপর অন্যকে অনুশাসন কর। নিজে নিয়ন্ত্রিত হলে অন্যকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করাই কঠিন। [অত্তবজ্ঞোঃ ১৫৯]

14)  
চিন্তার প্রতিফলন ঘটে স্বভাব বা প্রকৃতিতে। যদি কেউ মন্দ অভিপ্রায় নিয়ে কথা বলে বা কাজ করে দুঃখ তাকে অনুগমন করে। আর কেউ যদি সুচিন্তা নিয়ে কথা বলে বা কাজ করে সুখ তাকে ছায়ার মত অনুসরন করে। [যমকবজ্ঞোঃ -]
15)  
আলস্য অতিভোজের দরুন স্থূলকায় নিদ্রালু হয়ে বিছানায় গড়াগড়ি দেয়া স্বভাবে পরিণত হলে সেই মূর্খের জীবনে দুঃখের পুনঃ পুনরাবৃত্তি ঘটবে। [নাগবজ্ঞোঃ ৩২৫]
16)   
যিনি অস্থিরচিত্ত, যিনি সত্যধর্ম অবগত নন, যার মানসিক প্রসন্নতা নেই, তিনি কখনো প্রাজ্ঞ হতে পারেন না। [চিত্তবজ্ঞোঃ ৩৮]
17)   
প্রাজ্ঞ ব্যক্তি কখনো নিন্দা বা প্রশংসায় প্রভাবিত হয় না। [পন্ডিতবজ্ঞোঃ ৮১]
18)  
রণক্ষেত্রে সহস্রযোদ্ধার ওপর বিজয়ীর চেয়ে রাগ-ক্রোধ বিজয়ী বা আত্মজয়ী বীরই বীরশ্রেষ্ঠ। [সহস্‌সবজ্ঞোঃ ১০৩]
19)  
কাউকে কটু কথা বলবে না। কারণ সে- কটু প্রতু্ত্তর দিতে পারে। উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় তোমার জন্যেও কষ্টদায়ক হবে। দন্ডের প্রতিদন্ড তোমাকেও স্পর্শ করবে। [দন্ডবজ্ঞোঃ ১৩৩]
20)   
কোনো পাপকেই ক্ষুদ্র মনে করো না। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাপই জমা হতে হতে মূর্খের পাপের ভান্ড পূর্ণ করে ফেলে। [পাপবজ্ঞোঃ ১২১]
21) 
মূর্খরাআমার পুত্র, আমার অর্থ, আমার ধনএই চিন্তায় যন্ত্রণা ভোগ করে। যখন সে নিজেই নিজের না তখন পুত্র বা ধন তার হয় কিভাবে? [বালবগ্‌গোঃ ৬২]
22) ভালো কাজ সবসময় কর। বারবার কর। মনকে সবসময় ভালো কাজে নিমগ্ন রাখো। সদাচরণই স্বর্গসুখের পথ। [পাপবজ্ঞোঃ ১১৮]
সবটুকু একত্রে পড়ুন "গৌতম বুদ্ধের বাণী"