বেদ সম্পর্কে কিছু কথা

বেদ হল পৃথিবীর প্রাচীন গ্রন্থ গুলির মধ্যে একটি এবং হিন্দুদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ । বেদ যে আসমানি গ্রন্থ এ ব্যাপারে অনেক বিশেষজ্ঞ অভিমত দিয়েছেন । আমরা জানি আল্লাহ তা’আলা চার খানা প্রধান আসমানি গ্রন্থ (কুরান, ইঞ্জিল,যবুর ও তাওরাত) ও একশ খানা সহিফা গ্রন্থ নাযিল করেন । তাঁদের মতে বেদ এই সহিফা গ্রন্থ গুলোর মধ্যে পড়ে ।


আমরা জানার চেষ্টা করব ইশ্বর সম্পর্কে বেদ কি বলে । হিন্দুরা অনেক দেব দেবির পুজা করলেও হিন্দু ধর্ম গ্রন্থ গুলোর মতে হিন্দুদের কেবল মাত্র এক জন ইশ্বের পুজো করা উচিত ।বেদের ‘ব্রহ্ম সুত্র’ তে আছে “একম ব্রহ্মা দ্বৈত্য নাস্তি নহিনা নাস্তি কিঞ্চন” অর্থাৎ ইশ্বর এক তাঁর মত কেউ নেই কেউ নেই সামান্যও নেই । আরও আছে “তিনি একজন তাঁরই উপাসনা কর” (ঋকবেদ ২;৪৫;১৬) । “একম এবম অদ্বৈত্তম” অর্থাৎ তিনি একজন তাঁর মত আর দ্বিতীয় কেউ নেই (ঋকবেদ ১;২;৩) । “এক জনেই বিশ্বের প্রভু” (ঋকবেদ ১০;১২১;৩) ।
এছাড়াও অনেক জোর দিয়ে বলা হয়েছে --


“ন দ্বিতীয়, ন তৃতীয়, চতুর্থ ন পুচ্যতে


ন পঞ্চম, ন ষষ্ট, সপ্ত্য ন পুচ্যতে ।


ন অষ্টম, ন নবম, দশমো ন পুচ্যতে


য এতং দেভ মেক বৃতং বেদ” ।। (অথর্ব বেদ। সুক্ত ১৪;৪;২)


অর্থাৎ ‘পরমাত্তা এক। তিনি ছাড়া কেহই দ্বিতীয়, তৃতিয় বা চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ট বা সপ্তম, অষ্টম নবম বা দশম বলে বলিয়া অবিহিত আর কেহ নাই । যিনি তাহাকে এক বলিয়া যানেন তিনিই তাঁহাকে প্রাপ্ত হন’ । শ্রীমদ্ভগবদ গীতায় আছে-‘আমার আদি নাই, জন্ম নাই । আমি সকল জগতের প্রভু, আমার এই স্বরুপ যিনি জানেন, তিনি এই জিগতের সকল পাপ হইতে মুক্ত’ (গীতা, দশম অধ্যায়, শ্লোক/৩৭) ।এছাড়াও আছে ‘হে মহাত্মা তুমি ব্রহ্মার চেয়েও বড়, তুমি সৃস্টিকর্তা তাই তমাকে তাঁরা সকলে প্রনাম করিবে না কেন ? হে শ্রেষ্ট দেবতা, হে অনন্ত, হে জগতের আশ্রয়! তুমি ব্যক্ত ও অব্যক্ত ও ব্যক্ত ও অব্যক্তের অতীত যে পরম ব্রহ্মা তাঁহাই তুমি’ (গীতা, দশম অধ্যায়, শ্লোক ৩৭-৩৮) ।


সৃস্টিকর্তা এক এ সম্পর্কে আরও অনেক অনেক শ্লোক আছে তবে উপরের শ্লোক গুলোই যথেষ্ট এতা প্রমান করার জন্ন যে হিন্দু ধর্মে একেইশ্বরবাদ স্বীকৃত । যেহেতু হিন্দু ধর্ম প্রাচীন ধর্ম, এবং সবার শাস্ত্র পড়ার অধিকার ছিল না তাই সেই সময় কার কিছু ঋষিমুনির কারনে মুর্তি পুজোর উদ্ভব হয়েছে । এই প্রসঙ্গে ডা. চমনলাল গৌতম তাঁর বিষ্ণুরহস্য বই এর ১৪৯ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-‘ঋষিগন মুর্তি পুজা প্রচলিত করেছেন যাতে সেই মুর্তির মাধ্যমে সেই অসিম সত্তাকে দৈহিক আকৃতিতে নিজের সামনে দেখতে পায়’ । ইশ্বর যে নিরাকার তাঁর কোনো রুপ নেই, আকার নেই, হাত পা নেই তা ঋকবেদের এই শ্লোক থেকে বোঝা যায়-‘ন তস্য প্রতিমা অস্তি’ (৩২;৩) ।অর্থাৎ সেই পরমেশ্বরের কোনো আকার হয় না । এছাড়া বেদ মুর্তি পুজা করতেও নিষেধ করে । বেদ বলে- যে ব্যক্তি অলীক দেব দেবীর পুজা করে, সে দৃষ্টি হরনকারী গাঢ় অন্ধকারে ডুবে যায়’(ঋকবেদ-৫;২;৫)।আরও আছে ‘যারা সম্ভুতির (অর্থাৎ যা আল্লাহর সৃষ্টি যেমন জল, বাতাস, সুর্য ইত্যাদি) পুজা করে তারা অন্ধকারের দিকে যাচ্ছে । আর যারা অসম্ভুতির পুজা করে তারা আরো অন্ধকারের দিকে যাচ্ছে’ (ঋকবেদ) ।


হিন্দু ধর্মে যত ইশ্বরের নাম দেওয়া হয় সেগুলো আসলে এক জন ইশ্বরেরই গুনবাচক নাম । তাঁরই নাম ব্রহ্মা, তাঁরই নাম বিষ্ণু, তিনিই ইন্দ্র তিনিই সরস্বতি । বেদ থেকে তার সুস্পষ্ট প্রমান পাওয়া যায় । নিচে এ সম্পর্কে কয়েকটি শ্লোক দেওয়া হল --- “হে অগ্নি! তুমিই পুণাত্মাদের মনস্কামনা পুর্ণকারী ইন্দ্র । তুমিই উপাসনা লাভের অধিকারী । তুমিই বহুজনের প্রশংসিত বিষ্ণু । তুমিই ব্রহ্মা ও ব্রহ্মপতি” (ঋকবেদ- ২;১;৩) । “হে অগ্নি! তুমিই পুণ্যের ভান্ডার । তুমিই এঢ়া তুমিই সরস্বতি” (প্রাগুক্ত ২;১;১১) । “হে অগ্নি! তুমিই সম্পদ দানকারী সবিতা । তুমিই বায়ু উপাসকদের রক্ষাকারী” (প্রাগুক্ত ২;১;৭) । “হে অগ্নি! তুমিই কর, তুমিই পুষা । নিকটবর্তী আকাশের রক্ষাকারী শংকর”(প্রাগুক্ত ২;১;৬) । হে অগ্নি! তুমিই প্রতিশ্রুতি পুর্ণকারী বরুন । তুমিই প্রশংসনিয় মিত্র । তুমি আসলে নেতা আর‌্যাম” (প্রাগুক্ত ২;১;৪) ।


বেদ থেকে এরুপ সুস্পষ্ট প্রমানের পর বিভিন্ন নামে পুজিত হাজারো দেবতার ধারনা একেবারেই খারিজ হয়ে যায়।তবে ডা. চমনলালের কথা মেনে নিলে এটা বলা যেতে পারে যে বিভিন্ন ঋষিমুনি ইশ্বরের বিভিন্ন আকার বা মুর্তি তৈরি করায় আজ ইশ্বরের এত গুলো মুর্তির সৃষ্টি হয়েছে । এক ইশ্বর ছাড়া অন্য কোনো ইশ্বর নাই ।তাঁর অনেক সুন্দর সুন্দর নাম আছে । তবে তাঁর বিভিন্ন নাম কে বিভিন্ন ভগবান মনে করা বোকামী । উপরের শ্লোক গুলো থেকে এটাই প্রমানিত হলো ।বেদে আছে –“(ইন্দ্র, বরুন, সরস্বতি, মিত্র, অগ্নি, যম, বায়ু, বিষ্ণু প্রভৃতি) একই শক্তির বিভিন্ন নাম । দৃষ্টিবানেরা ও জ্ঞানীরা গুনের ভিত্তিতে ইশ্বরকে বিভিন্ন নামে আহ্ববান করে থাকেন” (প্রাগুক্ত ১০;১১৪;৫) ।এই সকল প্রমানের পরও যদি কেউ সে কথা মেনে না চলেন তাহলে তারা নির্বোধ ছাড়া আর কিছুই নয় । কারন বেদে বলা হয়েছে “ উৎ ত্বঃ পশ্যন্ম বাচম, উৎ ত্বঃ শৃরাবন্ম শ্রনোত্যে নাম’ (ঋকবেদ ১০;৭১;৪) । অর্থাৎ নির্বোধ লোকেরা গ্রন্থ দেখেও দেখে না, শুনেও শুনে না ।
Leave a Comment