Archive for August 2011

আপনি কি আল্লাহকে দেখেছেন? না দেখে থাকলে চেষ্টা করুন তো একবার.


http://sonarbangladesh.com/blog/uploads/tipu1900201101051294250024_1.jpg
 আল্লাকে দেখার জন্য প্রথমে মন থেকে সবকিছু ঝেড়ে ফেলুন।
 কিছুক্ষনের জন্য মনের ভিতর কাউকে স্থান দিবেন না।
 তাহলে আপনি চলে যেতে পারবেন চিন্তার সীমারেখার অনেক গভীরে।
 ফলে আপনার মন আপনার জন্য কিছু প্রশ্ন তৈরী করবে!
 আবার সেই মন নিজেই আপনাকে তার উত্তর দিবে।
 আপনি একটু ভিন্নভাবে ভিন্ন কিছু উপলব্দি করার সুযোগ পাবেন।
মনে রাখবেন,
সত্য অনিসন্ধিৎসু মন সর্বদা সত্যের সন্ধান পেয়ে থাকেন..................!!!
সত্য অনুসন্ধানীরা সব কিছুতেই স্রষ্টার সন্ধান পান, কারন জ্ঞানীরাই স্রষ্টাকে চেনে!
এটার নামই পৃথিবী। এর বুকেই আমরা বসবাস করি। আমাদের বাবা, দাদা, তার বাবা, তার দাদা এখানেই বেড়ে উঠেছিলেন; যাদের কেউ এখন জিবীত নেই। আমরাও আমাদের সন্তানদের কাছে এর মালীকানা ছেড়ে দিয়ে চলে যাব; কেননা আমরাও চিরদিন জিবীত থাকবনা। একই বৃত্তে আমাদের সন্তান, তাদের সন্তানও এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে। এর পরে যারা আমাদের শ্রমের অর্থে ক্রয় করা বাড়ী ও সহায় সম্পদের মালীক হবে তাদের সর্ম্পকে আমাদের নূন্যতম কোন ভবিষ্যত ধারনা নাই। কেননা আমরা বেশীর বেশী নিজের সন্তান ও নাতী পর্যন্তই ভাবতে পারি। 
http://sonarbangladesh.com/blog/uploads/tipu1900201101051294250024_1a.JPG
এটা হল পৃথিবীর রাত্রির কালীন ছবির দৃশ্য। যেটা স্যাটেলাইট থেকে তোলা হয়েছে। এই ছবি দেখেই আমরা বুঝে নিতে পারি পৃথিবীর কোন জায়গাটি বেশী আলোকিত কোন জায়গাটি তুলনামূলক ভাবে অন্ধকারাচ্ছন্ন অংশ।
পৃথিবীর সকল রূপ সকল সৌন্দর্য আমরা উপভোগ করতে পারি অথছ এতে আমাদের নূন্যতম কোন অবদান নেই। এখানে মানবজাতির ইচ্ছা অনিচ্ছায় কিছুই আসে যায়না। আমাদের চোখ আছে শুধু দেখতে পারি, চিত্ত আসে শুধু উপভোগ করতে পারি। এর বাহিরে কিছুই করতে পারিনা! 
http://sonarbangladesh.com/blog/uploads/tipu1900201101051294250024_2.JPG
এটি হল মাসের ১৪ তারিখের রাতের পূর্ন চাঁদ। যাকে পূর্নিমা হিসেবে বাংলা ভাষায় অভিহিত করা হয়। ফ্লোরোসেন্ট আলোর ন্যায় এর আলো প্রতিফলিত হয় সারা পৃথিবীর সর্বত্র। পৃথিবী থেকে এটি ৩,৮৪,৪০৩ কিমি দূরে অবস্থিত। যার ব্যাস ৩৪৭৬ কিমি, অর্থাৎ ৩৫০০ কিমি লম্বা একটি লম্বা রড এটার পেটে ঢুকিয়ে দিলে এদিক থেকে ওদিকে বেড়িয়ে যাবে, চাঁদ পৃথিবীর ৪ ভাগের এক ভাগের সমান।
মানুষের কোন কৃতিত্ব, যোগ্যতা, দক্ষতা, মর্যাদা প্রাপ্তির মাধ্যমে এটা আকাশে উদিত হয়না।
বিশাল এই টুকরাটিকে যদি কেউ একজন নিতান্ত দয়া করে এটাকে আকাশে উদিত না করাতেন, তাহলে পৃথিবীর সকল মানুষ গনভোট দিয়ে জয়লাভ করেও এটাকে আকাশে তুলতে, চারিদিকে ঘুরাতে কিংবা নিয়ন্ত্রন করতে সক্ষম হতেন না। 
http://sonarbangladesh.com/blog/uploads/tipu1900201101051294250024_1c.jpg
পৃথিবী কিভাবে সূর্যের আলো দ্ধারা আলোকিত হচ্ছে এটা তারই ছবি। পৃথিবী সূর্য থেকে খন্ডিত একটি গ্রহ মাত্র। সূর্য থেকে ১৪,৯০,০০,০০০ কিমি দূরে এর অবস্থান এবং এর ব্যাস ১২,৭৫৬ কিমি। অর্থাৎ ১৩,০০০ কিমি লম্বা একটি রড এটার পেটে ঢুকিয়ে দিলে এদিক থেকে ওদিকে বেড়িয়ে যাবে।
এভাবে হাজার বছর ধরে এই গ্রহে সকাল হয়েছে, সন্ধ্যা নেমেছে। আমাদের পূর্ব পূরুষেরাও এটা দেখে এসেছে, অনাগত ভবিষ্যৎ প্রজন্মও তাই দেখবে। এটাকে আপাত দৃষ্টিতে চিরস্থায়ী মনে হলেও মানুষ কিন্তু নশ্বর পৃথিবীতে একেবারেই ক্ষনস্থায়ী! পৃথিবী নিজের অস্থিত্বের জন্য কখনও মানুষের প্রয়োজনীতা অনুভব করেনা। বরং মানুষের অস্থিত্বের জন্য পৃথিবীকে তার প্রয়োজন অনেক বেশী। 
http://sonarbangladesh.com/blog/uploads/tipu1900201101051294250024_3.JPG
http://sonarbangladesh.com/blog/uploads/tipu1900201101051294250024_3.JPG
দিনের আলোতে পরিপূর্ন পৃথিবীর দৃশ্য। যার তিন ভাগ জল একভাগ স্থল! তিন বৃত্তের এক বৃত্ত পরিপূর্ন পানি দ্বারা পূর্ণ। বাকী দুই বৃত্তের মাঝেও পানির আধিক্য খোলা চোখেই নজরে পড়ে, আরো নজরে পড়ে পুরো দুটি মহাদেশ পরিপূর্ন সাদা বরফে ঢাকা।
বাকী সামান্য স্থল বিশিষ্ট জায়গা নিয়ে আমরা বসবাস করছি। মানবজাতি দারড়ে বেড়াচ্ছে এরই চামড়ার উপরে। একে অপরকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দিতে, হাজারো চেষ্টা প্রচেষ্টার ত্রুটি করছেনা। সামান্য ক্ষমতার দম্ভে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে জনবসতিকে সদা তটস্থ করছে। বাহু শক্তি ও অর্থ শক্তির মত্তে, বিস্তীর্ণ জনপদকে বিরাণ ও ছাড়খার করে দিচ্ছে। 
http://sonarbangladesh.com/blog/uploads/tipu1900201101051294250024_4.JPG
এখানে পৃথিবীকে আমরা তার ছোট চার ভাই যথাক্রমে; শুক্র, মঙ্গল, বুধ, প্লটো কে দেখতে পাচ্ছি। ছোট্ট ভাইদের তুলনায় পৃথিবী কত বড়, অনেক সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন! যেন প্রচুর প্রাচুর্যে ভরা! 
http://sonarbangladesh.com/blog/uploads/tipu1900201101051294250024_5.JPG
এখানে আমরা পৃথিবীকে তার ছোট চার ভাই সহ, বড় চার ভাই যথাক্রমে; ইউরেনাস, নেপচুন, শনি, বৃহস্পতির সাথে দেখা যাচ্ছে। বড় ভাইদের তুলনায় পৃথিবীর ব্যাপ্তী কত ছোট্ট! কত ক্ষুদ্র! কত অসহায়! 
http://sonarbangladesh.com/blog/uploads/tipu1900201101051294250024_6.JPG
এখানে পৃথিবীকে আমরা তার মা সূর্যের সাথে দেখতে পাচ্ছি। পৃথিবীর আয়তনের চেয়ে সূর্যের আয়তনের কি বিরাট ব্যবধান! সূর্যের তুলনায় পৃথিবী একটি ক্ষুদ্র বিন্দুর মত। পৃথিবীর চেয়ে সূর্য প্রায় ১৩ লক্ষ গুন বড় এবং এর ব্যাস ১৩,৯০,০০০ কিমি। অর্থাৎ ১৪ লক্ষ কিমি লম্বা একটি রড এটার পেটে ঢুকিয়ে দিলে সেটি অপর দিকে বেড়িয়ে যাবে।
এটির দূরত্ব যদি বর্তমানের চেয়ে বেশী হত পৃথিবী বরফের পিন্ড হয়ে যেত, যদি আরো কাছে হত তাহলে পৃথিবী মুরুভূমি হয়ে যেত। এত বিশাল আকৃতির অগ্নিগোলককে শুন্যে ঝুলিয়ে প্রতিনিয়ত দহন করা, ঘুরানো, নিয়ন্ত্রন, জ্বালানী সরবরাহ কিছুই মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছার সাথে সম্পর্কিত নয়। মানুষ তা থেকে কেবল উপকারই নিতে পারে, তাকে অস্বীকার, অপ্রয়োজন ভাবার ইচ্ছাও মানুষের নাই। কেননা এসব ইচ্ছা-অনিচ্ছা নির্ভর করে শুধু একজন মাত্র নিয়ন্ত্রকের হাতেই। 
http://sonarbangladesh.com/blog/uploads/tipu1900201101051294250024_7.JPG
তাহলে আসুন আমরা যে গ্যালাক্সির অধিবাসী, সেখানে সূর্যকে নিয়ে আমাদের সৌর-জগতের কি দশা!
এখানে সূর্যের সাথে Arcturus নক্ষত্রের সাথে তুলনা করা হয়েছে। Arcturus হল একটি বৃহদাকার নক্ষত্র, সূর্যের চেয়ে বহুগুনে বড় এটি। Arcturus এর তুলনায় সূর্যকে একটি ক্ষুদ্র অতি ক্ষুদ্র নক্ষত্রের মত দেখায়!
চিত্রে সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহ, বৃহস্পতিকে দেখাতে সুঁচের মাথার পরিমান স্থান দেওয়া হয়েছে! এখানে পৃথিবীর জন্য সুঁচ রাখার মত সামান্যতম একটু জায়গা নাই। 
http://sonarbangladesh.com/blog/uploads/tipu1900201101051294250024_8.JPG
আসুন বৃহত্তম Arcturus নক্ষত্রের সাথে, তার পরিবারের অন্য নক্ষত্রের সাথে তফাৎ দেখি।
এখানে অতিকায় বিশাল Antares নক্ষত্রকে দেখা যাচ্ছে, এখানে বৃহদাকার Arcturus নক্ষত্রটিকে অতি ক্ষুদ্র মনে হচ্ছে। এবং সূর্য কে বুঝাতে সূঁচের মাথার পরিমান আকার ধরা হয়েছে। পৃথিবী তো দূরের কথা চিত্রে বৃহষ্পতি বলে কোন গ্রহ আছে সেকথাও প্রমানিত হচ্ছেনা!
Antares মহাকাশের ১৫ টি বুহদাকার নক্ষত্রের একটি, যেটি পৃথিবী থেকে ১০০ আলোক বর্ষ দূরে। 
http://sonarbangladesh.com/blog/uploads/tipu1900201101051294250024_9.JPG
এই ছবিটির দিকে দেখুন!
এটা Cassini-Huygens Probe থেকে তোলা। সেটি যখন শনি গ্রহের বৃত্তের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল তখনকার পাঠানো ছবি।
লাল বৃত্তের মাঝে সাদা দাগের মত বিন্দুটির আমাদের প্রিয় পৃথিবী! যাকে আমাদের সৌরজগতের একটি গ্রহের অক্ষ থেকেই এক ক্ষুদ্র দেখা যায়।
যা আপনার আমার সবার দৃষ্টিতে একটি ক্ষুদ্র বিন্দু ছাড়া আর কিছুই নয়! সাধারনের কাছে এই বিন্দুর কোন ব্যাস, পরিধি, জ্যা নির্ধারণের কোন উপায় নেই।
http://sonarbangladesh.com/blog/uploads/tipu1900201101051294250024_9a.JPG
আবারো তাকিয়ে দেখুন, সে ক্ষুদ্র বিন্দুর প্রতি!! একটু ভাবুন!
অথছ এই ক্ষুদ্র বিন্দুতেই আমরা সকলেই একসাথে আছি.....!
এখানেই আমরা ঘটিয়ে চলছি যত আগ্রাসন, আর যত যুদ্ধ......!
আমাদের সকল সমস্যা এখানকার স্বার্থকে ঘিরেই.......!
এখানেই আমরা আমাদের শৌর্য-বির্যের ক্ষমতা দেখাচ্ছি......!
এখানেই যত বিজ্ঞান, অঙ্কন, সাহিত্য, সাংস্কৃতির সৃষ্টি......!
এখানেই আমাদের সভ্যতা বিনির্মাণ করছি, সমূদয় সৃষ্টিকূলকে সাথে নিয়ে....!
এখানেই আমাদের গতি, আমাদের সকল ধর্ম.....!
এখানেই আমাদের সকল জাতি, সকল দেশ, সকল সরকার, সকল কৃষ্টি....!
এখানেই আছে আমাদের সকল প্রিয়জন এবং সকল চরম ঘৃণিত ব্যাক্তি.....!
তাদের সবাইকে নিয়ে বসবাস করছি!
পৃথিবীর ৬০০ কোটিরও বেশী আদম সন্তান! আর.....
একটি দিনকে পেছনে ফেলে আরেকটি দিনের প্রত্যাশায় অবিরত লড়াই করছি।
এবার কিছুক্ষনের জন্য ভাবনাটি ছেড়ে দিন।
হয়ত চিন্তা করছেন দূরের ঐ নীল বিন্দুতে আপনি একা, বড় একাই অবস্থান করছেন।
চিন্তায় আছেন কেউ আপনাকে দেখতে পাচ্ছেনা। কেউ না, কেউ.......নয়.....!!!
আপনি কি করছেন?
কোথায় যাচ্ছেন?
কি খাচ্ছেন?
সব কিছুই যেন গোপনীয় থাকছে, কেউ আপনার কর্মকান্ড অবলোকন করার ক্ষমতায় নেই! আপনার জবাব দিহীর কোন ভয় নেই, দুঃচিন্তা নেই, তাই নেই কারো পরোয়া! 
http://sonarbangladesh.com/blog/uploads/tipu1900201101051294250024_10a.JPG
তবে, একজন মাত্র আছেন।
যিনি, আপনার মাথায় কয়টি চুল আছে তারও সূক্ষ্ম হিসেব রাখেন।
কে মারা যাচ্ছেন কিংবা কে জন্ম নিচ্ছেন সবকিছুর ব্যাপারেই তিনি সাম্যক অবগত।
কেননা,
“তাঁর কাছেই রয়েছে অদৃশ্য জগতের চাবি। এসব তিনি ব্যতীত কেউ জানেনা; জলে ও স্থলে যা কিছু আছে, তিনিই এ ব্যাপারে ওয়াকিফহাল। একটি পাতাও ঝড়ে না কিন্তু তিনিই জানেন। কোন শষ্য কণা মৃত্তিকার অন্ধকারে পতিত হয়না এবং সেটি আদ্র নাকি শুষ্ক; তা কিন্তু সব লিপিবদ্ধ রয়েছে প্রকাশ্য গ্রন্থে”।
সূরা আল্‌ আন-আম ৫৯।
অথছ, মানুষ অস্বীকার করে আল্লাহর সৃষ্টি সর্ম্পকে! কিন্তু তারা তাঁর মহা সৃষ্টি সর্ম্পকে এতটুকুনু ভাবেনা! মহা শূন্যের এই মহা বিস্ময়কর সৃষ্টি কি এমনিতেই সৃষ্টি হয়েছে, যার কোন একজন স্রষ্টা নাই?
আর সৃষ্টির চেয়ে স্রষ্টা শক্তিশালী; সৃষ্টিতেই স্রষ্টার পরিচয় লুকিয়ে থাকে। বাতাসের আকৃতি আমরা না দেখেও তাকে বিশ্বাস করি, বাতাস বিশ্বজগতে প্রলয় ঘটাতে সক্ষম। শব্দ কম্পনকে না দেখেও তার উপস্থিতিতে যখন কাঁচের ঘর ভেঙ্গে বালিতে পরিনত হয়, তখন তার উপস্থিতিকে মেনে নেই। চুম্বক শক্তিকে ধরে দেখতে না পারলেও, যখন তা মানুষের সৃষ্টিকে বিকল করে দেয়, তখন তাকে বিশ্বাস করি। উড়ন্ত ‘সসারকে’ এখনও মানুষ কব্জা করতে না পারলেও, কেউ বলেনা সে মহাশূন্যে এমনিতেই সৃষ্টি হয়েছে বরং বলা হয় “তাকে কেউ সৃষ্টি করেছে, মানুষকে দেখতেই তাকে এখানে পাঠানো হচ্ছে”।
শুধুমাত্র আল্লাহর সৃষ্ট সম্পদের বেলায় কথা আসলে বলা হয়, তা এমনিতেই সৃষ্টি হয়েছে, যার জন্য কোন স্রষ্টার প্রয়োজন নাই! উপরের বিস্তারিত বর্ণনাগুলোই কি আল্লাহকে দেখতে-চিনতে যথেষ্ট নয়! তার পরও কি নিজেকে অনেক বড় ও শ্রেষ্টতম ক্ষমতাবান ভাবনেন!? নিজেকে সেরা বুদ্ধিমান ভাববেন!?
আল্লাহ বলেছেন, “মানুষের সৃষ্টি অপেক্ষা নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলের সৃষ্টি কঠিনতর; কিন্তু অধিকাংশ মানুষই তা অনুধাবন করেনা”। সূরা আল-মুমীন ৫৭।
উপরে বর্ণিত আল্লাহর সমূদয় সৃষ্টি,
সৃষ্টির উদ্দেশ্য......
জানিয়ে দিতে......
চিনিয়ে দিতে.......
বুঝিয়ে দিতে.......
সত্য, সোজা ও সঠিক পথ দেখিয়ে দিতে,
মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে পাঠিয়েছেন, একজন প্রতিনিধি হিসেবে।
যিনি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ হতে দুনিয়াবাসীর জন্য শ্রেষ্টতম উপহার। কেননা আল্লাহ যদি নিতান্ত দয়া ও অনুগ্রহ করে, তাঁর প্রতিনিধির মাধ্যমে এসবের ব্যাখা মানব সম্প্রদায়কে না জানাতেন, আমরা কখনও তা জানতাম না, বুঝতাম না। দুটি চোখ হাতে নিয়ে অন্ধের ন্যায় পৃথিবীর বিশাল ভূ-খন্ডে দিকহারা পঙ্গপালের মত ঘুরে বেড়াতাম!!! অতপর চরম ক্ষতিগ্রস্থ হতাম!!!
তাই ভাবুন, বারংবার চিন্তা করুন, তাহলে মহান আল্লাহ সহায় হবেন। তাঁর কাছে সত্যের সন্ধান চাইলে, তিনি বান্দাকে ফেরৎ দেন না, কেননা হেদায়াত আল্লাহর পক্ষ হতে সবচেয়ে বড় মূল্যবান সম্পদ।
একজন ব্যক্তিও যদি আমার এই ক্ষুদ্র ধারনা থেকে উপকৃত হন, তাহলে আমিও উপকৃত হইব। যদিও এই লিখাটি পড়তে সর্বমোট পাঁচ মিনিট সময় লাগবে, তবে আমার যথেষ্ট সময় ব্যয় করতে হয়েছে এর পিছনে। ভাবতে হয়েছে নানাভাবে, কিভাবে এটাকে উপস্থাপনা করা যায়? একজন মাত্র পাঠক, দর্শক এটা পড়ে ও দেখে যদি তার আত্মায় তৃপ্তি পায়, সেটাই হবে আমার জন্য সাফল্য। কেননা আমি আল্লাহকে ভালবাসি, আর ভালবাসি তাদের; যারা নিজেরাও মহান আল্লাহকে ভালবাসেন।
সংকলনে,
নজরুল ইসলাম টিপু।
আবুধাবী, সংযুক্ত আরব আমীরাত।
০১-০১-১১
(আকর্ষনীয় পিডিএফ ফাইল পেতে চাইলে, আপনার ই-মেইল পাঠান)
tipu1900@yahoo.com
সবটুকু একত্রে পড়ুন "আপনি কি আল্লাহকে দেখেছেন? না দেখে থাকলে চেষ্টা করুন তো একবার."

ইসলাম ও ইহুদী ধর্মের কিছু সাদৃশ্য


সাধারনত মুসলমানরা ইহুদীদের দেখতে পারে না। ইহুদীরাও সাধারনত মুসলমানদের দেখতে পারে না। তবে ইসলাম ও ইহুদী ধর্মে পার্থক্য যেমন আছে তেমনি বেশ কিছু ক্ষেত্রে সাদৃশ্য আছে।
. মুসলমান ও ইহুদীরা এক ঈশ্বরবাদে বিশ্বাসী। সৃষ্টিকর্তা এক এবং তাঁর কোন শরীক নেই।
. মুসলমান ও ইহুদীদের মতে তাদের জাতির পিতা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) / আব্রাহাম। সমগ্র মানব জাতির পিতা হযরত আদম (আঃ) / অ্যাডাম।
. মুসলমানরা প্রতিদিন পাঁচ বার (ভোরে , দুপুরে , বিকেলে , সন্ধ্যায় ও রাতে) নামাজ আদায় করে । ইহুদীরা প্রতিদিন তিন বার (ভোরে , দুপুরে ও রাতে) প্রার্থনা করে।
. এই দুই ধর্মেই প্রার্থনার জন্য কিবলা (দিক) আছে । মুসলমানদের কিবলা মক্কার কাবা ও ইহুদীদের কিবলা (দিক) জেরুজালেমের প্রার্থনা স্থান।
. মুসলমানদের জীবনে একবার হজ্জ্ব করতে হয় মক্কায়। ইহুদীদের বছরে তিনবার তীর্থ যাত্রা করতে হয় জেরুজালেমে।
. মুসলমান ও ইহুদী পুরুষদের খাতনা (circumcision) করতে হয়।
. দাড়ি রাখতে দুই ধর্মেই বলা আছে। দাড়ি কাটা দুই ধর্মের দৃষ্টিতে গুনাহ / পাপ।
. সম্পদ দান করা দুই ধর্মেই অবশ্য পালনীয় বিষয়। মুসলমানরা নিজের সম্পদের একটি অংশ যাকাত হিসেবে দেয়। ইহুদীরা তাদের সম্পদের একটি অংশ প্রতি বছর চ্যারিটি হিসেবে দেয়।
. মুসলমানরা কোন ব্যাক্তিকে দেখলে সালাম দেয়। ইহুদীরা কোন ব্যাক্তিকে দেখলে সালোম / শালোম বলে। দুই শব্দের অর্থই শান্তি।
১০. দুই ধর্মেই বিশেষ আইন রয়েছে। মুসলমানদের জন্য শরীয়াহ আইন। ইহুদীদের জন্য হালাখা আইন। এই দুই আইনেরই শাস্তির বিধান কঠোর। জেনা (বিয়ে বহির্ভুত শারীরিক সম্পর্ক) করা এই আইন অনুসারে মারাত্নক অপরাধ। জেনা করলে মুসলমানদের শরীয়াহ আইন মোতাবেক ১০০ বেত্রাঘাত। ইহুদীদের হালাখা আইন মোতাবেক পাথর ছুড়ে মারা।
১১. ইসলাম ধর্ম মতে শুক্রবার সপ্তাহের পবিত্র দিন ও বিশেষ ইবাদতের দিন (জুম্মা) । ইহুদী ধর্ম মতে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সপ্তাহের পবিত্র সময় ও বিশেষ প্রার্থনার সময়।
১২. দুই ধর্মেই নির্দিষ্ট খাবারের অনুমতি আছে। মুসলমানদের জন্য
হালাল খাবার। ইহুদীদের জন্য কোশার খাবার। দুই ধর্ম মতেই পশুর রক্ত ও শুকরের মাংস কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। একজন মুসলমান ইহুদীদের কোশার খাবার খেতে পারবে। একজন ইহুদী মুসলমানদের হালাল খাবার খেতে পারবে। তবে মুসলমানদের জন্য কোশারের মধ্যে অ্যালকোহল খাওয়ার অনুমতি নেই কারন যেকোন ধরনের অ্যালকোহল মুসলমানদের জন্য হারাম।
১৩. পশু জবাইয়ের নিয়ম দুই ধর্মেই প্রায় এক ধরনের। মুসলমানেরা প্রতিটি পশু জবাইয়ের আগে আল্লাহর নাম স্মরন করে। ইহুদীরা শুধু একবার প্রভুর নাম স্মরন করে একসাথে সব পশু জবাই করে।
১৪. মেয়েদের ক্ষেত্রে দুই ধর্মেই মাথায় কাপড় দেয়ার বিধান আছ তবে ইসলাম ধর্মে মেয়ে প্রাপ্ত বয়স্ক হলেই মাথায় কাপড় দেয়ার বিধান আছে। আর ইহুদী ধর্মে মেয়ে বিয়ে করলে মাথায় কাপড় বাধার বিধান আছে। নারী ও পুরুষের জন্য শালীন  কাপড় পরার বিধান দুই ধর্মে আছে।
১৫. পুরুষের টুপি পড়ার বিধান দুই ধর্মে আছে।
১৬. ইবাদত / প্রার্থনার অংশ হিসেবে সারাদিন পানাহার থেকে বিরত থাকা দুই ধর্মেই আছে। মুসলমানদের রমজান মাসের প্রতিদিন রোযা রাখা ফরজ  আর ইহুদীদের  বছরে পাঁচটি বিশেষ দিনে পানাহার থেকে বিরত থাকা অবশ্য পালনীয়।
১৭. সন্তান জন্ম নিলে মুসলমানদের অনেকে বাচ্চার কানের কাছে আযান দেয়। ইহুদীরা অনেকে বাচ্চার কানের কাছে শিমা দেয়।
১৮. দুই ধর্মেই সুদ নিষিদ্ধ। 
১৯. ধর্মীয় দিনপুঞ্জিকায় মাস নতুন চাঁদ দেখে ঠিক করা হয়।
২০. সন্তানের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে রাখার সময় ছাগল বা ভেড়া জবাই দেয়া ধর্মের বিধান।
২১. দুই ধর্ম মতেই জেরুজালেম হচ্ছে পবিত্র নগরী (Holy City) । মুসলিমদের জন্য মক্কা হচ্ছে সবচেয়ে পবিত্র নগরী তারপর মদীনা তারপর জেরুজালেম। ইহুদীদের জন্য জেরুজালেম সবচেয়ে পবিত্র নগরী। আগে মুসলিমদের কিবলা জেরুজালেমে ছিলো। পরে আল্লাহর নির্দেশে মক্কা নগরীর কাবা হয় মুসলিমদের কিবলা।
২২. কোরআন অনুসারে অমুসলিমদের মধ্যে একমাত্র ইহুদী-নাছারা জাতির নারীর সাথে মুসলিম পুরুষের বিয়ের অনুমতি আছে। আলেম ওলামাদের মতে এই বিয়ে জায়েজ হবে তবে তা মাকরুহ / পছন্দনীয় কাজ না। এই ধরনের বিয়ে করলে শর্ত হলো সন্তান মুসলিম হতে হবে।

ইহুদী পুরুষরা প্রার্থনা করার সময় মাথায় টুপি পড়ে। ইহুদীদের টুপির সাথে মুসলমানদের টুপির মিল আছে।
http://img856.imageshack.us/img856/179/jewishobservancesandrit.jpg
ইহুদী বিবাহিত মহিলাদের মাথায় কাপড় দিয়ে চুল ঢেকে রাখা ও লম্বা কাপড় পড়া বাধ্যতামূলক। মুসলমান যে কোন প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ের (বিবাহিত , অবিবাহিত) মাথায় কাপড় দেয়া বাধ্যতামূলক ও শরীর ঢেকে রাখতে লম্বা কাপড় পড়ার বিধান আছে।
http://img810.imageshack.us/img810/2791/headscarf.jpg



সবটুকু একত্রে পড়ুন "ইসলাম ও ইহুদী ধর্মের কিছু সাদৃশ্য"

বিদায় হজের মর্মবাণী (হে মানুষ শোনো!)

সবটুকু একত্রে পড়ুন "বিদায় হজের মর্মবাণী (হে মানুষ শোনো!)"

বিভিন্ন ধর্মে সৃষ্টিকর্তার নাম


এই পৃথিবীতে সকল ধর্মীয় মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ সৃষ্টিকর্তাকে স্বরন করে তাদের নিজ নিজ ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসারে। বিভিন্ন ধর্ম অনুসারীরা সৃষ্টিকর্তাকে বিভিন্ন নামে ডাকে।
সারা বিশ্বের ইসলাম ধর্ম অনুসারী সকল মুসলমান কালাম-এ-পাক আল-কোরআনের ভাষা আরবীতে সৃষ্টিকর্তাকে ডাকে 'আল্লাহ'  / 'আল্লাহ তা'য়ালা'। মুসলমানরা সৃষ্টিকর্তাকে 'খোদা' , 'মা'বূদ' , 'পারভারদিগার' ইত্যাদি নামেও ডাকে।
খ্রিষ্টানিটি অনুসারী খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় ভাষা অ্যারামায়িক ভাষায় সৃষ্টিকর্তাকে ডাকা হয় 'ইলাহ' । 'আলাহা' নামেও সৃষ্টিকর্তাকে ডাকা হয় অ্যারামায়িক ভাষায়। সৃষ্টিকর্তাকে 'ঈশ্বর' নামে ডাকে ভারতীয় উপমহাদেশের খ্রিষ্টানরা । আরবীয় খ্রিষ্টানেরা 'আল্লাহ' নামে সৃষ্টিকর্তাকে ডাকে। পশ্চিমা বিশ্বের খ্রিষ্টানেরা সৃষ্টিকর্তাকে ইংরেজী ভাষায় ডাকে 'গড'।
জুডাইজম অনুসারী ইহুদীদের ধর্মীয় ভাষা হচ্ছে হিব্রু। হিব্রুতে সৃষ্টিকর্তাকে অনেক নামে ডাকা হয়। 'ইলোহিম' , 'ইলোয়াহ', 'ইয়াহওয়েহ' ইত্যাদি নামে ডাকে।
হিন্দু ধর্মের মূল ভাষা সংস্কৃত। বেশির ভাগ হিন্দু সৃষ্টিকর্তাকে ডাকে 'ভগবান'। ' ব্রহ্ম' , 'ঈশ্বর' , 'পরমেশ্বর' নামেও ডাকে সৃষ্টিকর্তাকে হিন্দুরা।
শিখ ধর্মে সৃষ্টিকর্তার নাম 'ওয়াহেগুরু'।এই নামেই শিখ ধর্মাবলম্বীরা সৃষ্টিকর্তাকে ডাকে। 
'এক ওনকার' , 'সৎনাম', 'নিরাঙ্কার' (নিরাকার), 'আকাল পুরাখ' ইত্যাদি নামেও সৃষ্টিকর্তাকে ডাকা হয়।
সর্বশেষ সম্পাদনা করেছেন মাহমুদ রাব্বি (10-07-2011 12:19 PM)
সবটুকু একত্রে পড়ুন "বিভিন্ন ধর্মে সৃষ্টিকর্তার নাম"

পবিত্র কুরআন শরীফ এর প্রথম বাংলা অনুবাদ


http://www.rongmohol.com/extensions/pic_man/img/upload/4724Girish_chandra_sen.JPG
গিরিশচন্দ্র সেন (১৮৩৪ বাংলা ১২৪১ - ১৯১০)। ভাই গিরিশচন্দ্র সেন নামে তিনি অধিক পরিচিত। তাঁর প্রধান পরিচয় ইসলাম ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআন- এর প্রথম বাংলা অনুবাদক হিসেবে। তখন প্রায় ধর্মগ্রন্থ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা ছিল যে, মূলভাষা থেকে অনূদিত হলে গ্রন্থটির পবিত্রতা ক্ষুণ্ন হবে। পবিত্র কুরআন সম্পর্কেও এমন ধারণা ছিল। এ কারণে অনেক মুসলিম মনীষী এর বঙ্গানুবাদ করতে সাহস পাননি। গিরিশচন্দ্র সেনই অন্য ধর্মালম্বী হয়েও এই ভয়কে প্রথম জয় করেন। শুধু কুরআন শরীফের অনুবাদ নয় তিনি ইসলাম ধর্ম বিষয়ক অনেক গ্রন্থ অনুবাদ করেন। তিনি ইসলাম ধর্ম নিয়ে অনেক গবেষণাও করেন।
জন্ম ও বংশপরিচয়
ভাই গিরিশচন্দ্র সেন বর্তমান নরসিংদী জেলার পাঁচদোনা গ্রামে এক বিখ্যাত দেওয়ান বৈদ্যবংশে জন্মগ্রহণ করেন।[১] গিরিশচন্দ্রের পিতা ছিলেন মাধবরাম সেন এবং পিতামহ ছিলেন রামমোহন সেন। গিরিশচন্দ্ররা ছিলেন তিন ভাই। ঈশ্বরচন্দ্র সেন, হরচন্দ্র সেন এবং সর্বকনিষ্ঠ গিরিশচন্দ্র সেন। ভাই গিরিশচন্দ্র সেনের পরিবার ছিল অত্যন্ত গোঁড়াপন্থি। পরিবারে সনাতন ধর্মের আচরণ প্রয়োজনের তুলনায় একটু বাড়াবাড়ি রকমভাবেই মেনে চলা হতো। এমন একটি কুসংস্কারাচ্ছন্ন পরিবারে জন্ম নিয়েও গিরিশচন্দ্র সেন একজন সম্পূর্ণ সংস্কার মুক্ত মানুষ হয়েছিলেন। অন্য ধর্মের উপর গবেষণা করে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
বাল্যকাল ও আরবি শিক্ষা
প্রাথমিক পড়া শেষ করে গিরিশচন্দ্র ঢাকার পোগোজ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। কিন্তু তিনি বেশিদিন বিদ্যালয়ে তাঁর পড়াশোনা হয়নি। তাঁর বিদ্যালয় ছাড়ার কারণ নিয়ে একটি ঘটনা প্রচলিত রয়েছে। একদিন তিনি শ্রেণীকক্ষে দেখলেন শিক্ষক তাঁর এক সহপাঠীকে পড়া না পারার জন্য খুব মারছেন। এই দেখে তাঁর মনেও ভয় ধরে গেল, শিক্ষক যদি তাঁকেও মারেন। এই ভয়ে তিনি বিদ্যালয় থেকে পালিয়ে বাসায় চলে এলেন। তাঁর বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার এখানেই সমাপ্তি। এরপর তিনি পাঁচদোনায় নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন। তার পাশের গ্রাম শানখোলায় কৃষ্ণ চন্দ্র রায় নামে একজন খুব ভালো ফারসি জানা লোকের কাছে গিরিশচন্দ্র ফারসি ভাষা শিখতে শুরু করেন।[১] বছর দুয়েকের মধ্যে ফারসি ভাষা তিনি বেশ ভালো ভাবেই আয়ত্ব করে ফেলেন। গিরিশচন্দ্র ময়মসিংহের ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট ও কাজী মৌলবী আব্দুল করিম সাহেবের কাছে রোক্কাতে আল্লামী অধ্যয়ন করেন।
১৮৭৬ সালের আরবি শিক্ষার জন্য গিরিশ চন্দ্র লক্ষ্মৌ যান। লক্ষ্মৌ ব্রাহ্ম সমাজের আনুকূল্যে এবং সহযোগিতায় জ্ঞানবৃদ্ধ মৌলবী এহসান আলী সাহেবের কাছে আরবি ব্যাকরণ ও দিওয়ান-ই-হাফিজের পাঠ গ্রহণ করেন। লক্ষ্মৌ থেকে কলকাতায় ফিরে একজন মৌলবীর কাছে এ বিষয়ে আরও কিছু শিক্ষা গ্রহণ করেন। এরপর ঢাকায় নলগোলায় মৌলবী আলিমউদ্দিন সাহেবের কাছে আরবি ইতিহাস ও সাহিত্যের পাঠ গ্রহণ করেন।[১]
কর্মজীবনে প্রবেশ
বেশ কিছুদিন বেকার বসে থাকার পর তিনি তাঁর মেজভাইয়ের সাথে চাকরির খোঁজে ময়মনসিংহ গমন করেন। সেখানে তিনি ময়মনসিংহ জেলাস্কুলে সহকারী শিক্ষকের (দ্বিতীয় পন্ডিত) পদে যোগদান করেন। কিন্তু গিরিশচন্দ্র সামান্য এক চাকরির মাঝে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখতে পারলেন না। তাঁর ছিল জ্ঞানের পিপাসা। তিনি নিজে নিজেই পড়াশোনা শুরু করলেন। সাংবাদিকতা ও সাহিত্যচর্চাও শুরু করলেন গিরিশচন্দ্র। তৎকালীন ঢাকা থেকে প্রকাশিত 'ঢাকা প্রকাশ' পত্রিকায় তিনি ময়মনসিংহের সংবাদদাতা ছিলেন। তাছাড়া এই পত্রিকায় তাঁর অনেকগুলো লেখাও প্রকাশিত হয়েছিল।
ব্রাহ্ম ধর্মের দীক্ষালাভ
চাকরি ছেড়ে দিয়ে গিরিশচন্দ্র কলকাতায় গমন করেন। কলকাতায় যাওয়ার পর তাঁর সাথে দেখা হয় রাজা রামমোহন রায় প্রবর্তিত ব্রাহ্মধর্মের তৎকালীন প্রচারক কেশবচন্দ্র সেনের। সে সময় কেশবচন্দ্র ছিলেন ব্রাহ্মধর্মের নববিধান শাখার প্রধান। তাঁরই প্রভাবে গিরিশচন্দ্র সেন ব্রাহ্ম মতবাদে দীক্ষা গ্রহণ করেন। ব্রাহ্মসমাজ তাঁর কর্তব্যনিষ্ঠায় মুগ্ধ হয়ে তাঁকে ভাই উপাধিতে ভূষিত করে।
কুরআনের প্রথম বাংলা অনুবাদক
কেশবচন্দ্রের অনুরোধ ও ব্যবস্থাপনাতে তিনি ফারসি ভাষায় আরো গভীর জ্ঞান লাভ এবং আরবি-ফারসি সাহিত্যের ওপর পড়াশোনা করার জন্য কানপুর ও লখনউ গমন করেন। ফিরে আসার পর কেশবচন্দ্রের উৎসাহেই তিনি ইসলামি দর্শনের উপর গবেষণা শুরু করেন। কিন্তু ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে পড়াশোনা ও গবেষণা করার জন্য প্রধান বাঁধাই ছিল ভাষা। হিন্দু ও খ্রিস্ট ধর্মের ধর্মগ্রন্থসমূহ অনেক আগেই বাংলায় অনূদিত হয়েছিল, কিন্তু ইসলাম ধর্মের কোন ধর্মশাস্ত্রই বাংলাভাষায় ছিলনা। বিশেষ করে পবিত্র কুরআন ও হাদিস তখনো বাংলায় প্রকাশিত হয়নি। যার ফলে কুরআনের মর্মার্থ অনুবাধন করা থেকে বৃহত্তর মুসলিম গোষ্ঠী পুরোপুরিই বঞ্চিত ছিল। তাই ব্রাহ্মসমাজের কেশবচন্দ্র সেন পরিচালিত নববিধান সভা ইসলাম ধর্মগ্রন্থসমূহ বাংলায় অনুবাদ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। স্বাভাবিকভাবেই, আরবি-ফারসি ভাষার সুপন্ডিত ভাই গিরিশচন্দ্র সেন অত্যন্ত দক্ষতার সাথে এ দায়িত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করেন।
লেখক গিরিশচন্দ্র সেন
তিনি কুরআন শরীফের সম্পূর্ণ অংশ, মিশকাত শরীফের প্রায় অধিকাংশ, হাদিস, তাজকিরাতুল আউলিয়া, দিওয়ান-ই-হাফিজ, গুলিস্তাঁ, বুঁস্তা, মকতুব্বত-ই-মাকদুস, শারফ উদ্দিন মুনিবী, মসনভী-ই-রুমী, কিমিয়া-ই-সাদত, গুলশান-ই-আসরার ইত্যাদিসহ বহু ইসলামি গ্রন্থ বাংলায় অনুবাদ করেন।
কুরআনের অনুবাদ প্রকাশ
[justify]অনুবাদক হিসেবে মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তিনি কুরআনের অনুবাদের কাজ শুরু করেন। তিনি পর্যায়ক্রমে মোট ১২ টি খন্ডে এই অনুবাদক্ররম সমাপ্ত করেন। 'তাপসমালা'র দুটো খন্ড বের হওয়ার পর ১৮৮১ সালের ১২ ডিসেম্বর কুরআনের প্রথম খন্ড প্রকাশিত হয়। প্রথম খন্ড প্রকাশের সময় গিরিশচন্দ্র অনুবাদকের নাম গোপন রাখেন। কারণ তৎকালীন সময়ে কাজটি যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। মুসলিম সমাজে এর প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে সে সম্পর্কে তাঁর কোন ধারণাই ছিলনা। গ্রন্থটিতে শুধুমাত্র প্রকাশক গিরিশচন্দ্র সেন এবং মুদ্রক তারিণীচরণ বিশ্বাসের নাম ছিল। ৩২ পৃষ্ঠার এই খন্ডের মূল্য ছিল মাত্র চারআনা। কিন্তু গিরিশচন্দ্রের আশংকা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত হলো। মুসলমান আলেমসমাজ এই মহৎকর্ম সম্পাদন করার জন্য এই অজ্ঞাতনামা অনুবাদকের প্রশংসা করে ব্রাহ্মসমাজের নিকট পত্র প্রেরণ করেন। তাঁদের প্রশংসাপূর্ণ পত্রের অংশবিশেষ নিন্মে তুলে ধরা হলোঃ
“    
আমরা বিশ্বাস ও জাতিতে মুসলমান। আপনি নিঃস্বার্থভাবে জনহিত সাধনের জন্য যে এতোদৃশ চেষ্টা ও কষ্ট সহকারে আমাদিগের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআনের গভীর অর্থ প্রচারে সাধারণের উপকার সাধনে নিযুক্ত হইয়াছেন, এজন্য আমাদের আত্যুত্তম ও আন্তরিক বহু কৃতজ্ঞতা আপনার প্রতি দেয়। 

“    
কুরআনের উপরিউক্ত অংশের অনুবাদ এতদূর উৎকৃষ্ট ও বিস্ময়কর হইয়াছে যে, আমাদিগের ইচ্ছা, অনুবাদক সাধারণ সমীপে স্বীয় নাম প্রকাশ করেন। যখন তিনি লোকমন্ডলীয় এতোদৃশ্য উৎকৃষ্ট সেবা করিতে সক্ষম হইবেন, তখন সেই সকল লোকের নিকট আত্ন-পরিচয় দিয়া তাঁহার উপযুক্ত সম্ভ্রম করা উচিত।

কুরআন অনুবাদ শেষ করে ভাই গিরিশচন্দ্র্র সেন বলেছিলেনঃ
“    
আজ কুরআনের সমাপ্ত দেখিয়া আমার মনে যুগপৎ হর্ষ-বিষাদ উপস্থিত। হর্ষ এই যে, এত কালের পরিশ্রম সার্থক হইল। বিষাদ এই যে, ইহার প্রথমাংশ শ্রী মদাচার্য্য কেশবচন্দ্রের করকমলে অর্পণ করিয়াছিলাম। তিনি তাহাতে পরমাহ্লাদিত হইয়াছিলেন এবং তাহার সমাপ্তি প্রতীক্ষা করিতেছিলেন। শেষাংশ আর তাঁহার চক্ষুর গোচর করিতে পারিলাম না। ঈশ্বর তাঁহাকে আমাদের চক্ষুর অগোচর করিলেন। তিনি অনুবাদের এরূপ পক্ষপাতী ছিলেন যে, তাহার নিন্দা কেহ করিলে সহ্য করিতে পারিতেন না। আজ অনুবাদ সমাপ্ত দেখিয়া তাঁহার কত না আহ্লাদ হইত, এছাড়াও তাঁহার কত আশীর্ব্বাদ লাভ করিত।

কুরআনের সম্পূর্ণ খন্ড একত্রে প্রকাশিত হয় ১৮৮৬ সালে। সম্পূর্ণ খন্ডেই প্রথম তিনি স্বনামে আত্নপ্রকাশ করেন। ভাই গিরিশ্চন্দ্র সেন অনূদিত কুরআনের চতুর্থ সংস্করণে মৌলানা আকরাম খাঁ একটি প্রশংসাসূচক ভূমিকা লিখেছিলেন। 
হাদিসের অনুবাদ
কুরআনের পর তাঁর আর একটি বড় কাজ হাদিসের অনুবাদ। হাদিসও কয়েকখন্ড পর্যায়ক্রমে প্রকাশিত হয়। এর প্রথম খন্ড হাদিস-পূর্ব-বিভাগ (১ম খন্ড) প্রকাশিত হয় ১৮৯২ সালের ২৪ জানুয়ারি। শেষ খন্ড হাদিস-উত্তর-বিভাগ (৪র্থ খন্ড) প্রকাশিত হয় ১৯০৮ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর।
মৃত্যু
মুক্তমনা ও অসাধারণ মানুষ ভাই গিরিশচন্দ্র সেন ১৯১০ সালের ১৫ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন।


তথ্যসুত্র : বাংলা উইকি
সবটুকু একত্রে পড়ুন "পবিত্র কুরআন শরীফ এর প্রথম বাংলা অনুবাদ"
Posted in by Akashnill. No Comments

সুখী জীবনের জন্য- অটোসাজেশন


বারবার উচ্চারিত ইতিবাচক শব্দের প্রভাব সম্পর্কে সাধকেরা সচেতন ছিলেন আদিকাল থেকেই। নবীজী (স.) বলেছেন কারো সাথে দেখা হলে সালাম বিনিময়ের পর কুশল জিজ্ঞেস করলে বলবে, “শোকর আলহামদুলিল্লাহ বেশ ভালো আছি”। তিনি এটা কেন বলেছিলেন, বললে কী লাভ হবে, কেন বলবো তা আমরা হাজার বছর ধরেও বুঝি নি। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রথম সারির বেশ কয়েকজন চিকিৎসকের এ বিষয়ের গবেষণা ও প্রয়োগ প্রক্রিয়া তাক লাগিয়ে দেয় পুরো বিশ্বকে। এমনই একজন ফরাসী মনোবিজ্ঞানী ডা. এমিল কোয়ে। ১৯১০ সাল থেকে তিনি শুরু করলেন নিরাময়ের ক্ষেত্রে অটোসাজেশন চর্চার গুরুত্ব নিয়ে গবেষণা। কোনো প্রকার ওষুধ ছাড়াই শুরু করেন বিভিন্ন ধরনের মনোদৈহিক রোগের চিকিৎসা। তার ক্লিনিকে আসা রোগীদেরকে সকাল-বিকাল একাগ্র মনোযোগ দিয়ে একটি অটোসাজেশন বলতে হতো, ‘ডে বাই ডে ইন এভরি ওয়ে আই এম গেটিং বেটার এন্ড বেটার’। এভাবেই সকাল-বিকাল বিশ বার চর্চা করে হাজার হাজার রোগী মাইগ্রেন, মাথাব্যাথা, বাতব্যাথা, প্যারালাইসিস, তোতলামি, গ্যাস্ট্রিক, আলসার, অনিদ্রা এমনকি টিউমার পর্যন্ত ভালো হয়ে গেল। বাংলাদেশেও প্রফেসর এম ইউ আহমেদ প্রবর্তিত মেডিস্টিক সাইকো থেরাপি প্রক্রিয়ায় একইভাবে হাজার হাজার রোগী বিভিন্ন ধরনের জটিল ব্যাধি থেকে মুক্ত হয়েছেন।
ইতিবাচক এ অটোসাজেশনের শক্তির মূল রহস্য কোথায় ?
মনোবিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন যে আমাদের মন বা নার্ভাস সিস্টেম বাস্তবতা ও কল্পনার মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না। তাই নাটক বা সিনেমায় কোনো হাসির জিনিস দেখলে যেমন চোখে মুখে হাসির রেশ ফুটে ওঠে, তেমনি কোনো বিরহ বা বিচ্ছেদের ঘটনা দেখলে মন খারাপ হয়ে যায়। অথচ আমরা জানি এর পুরোটাই অভিনয়। তার পরেও উত্তেজনা ও বিষাদের রেশ আমাদের মনের ভেতর অনেকক্ষণ থাকে। বাস্তবেও যখন আমরা কখনো এরকম কোনো ইতিবাচক বা নেতিবাচক শব্দ উচ্চারণ করি তার প্রভাব আমাদের দেহে মনে অনুভব করি। কারণ বারবার ভালো থাকার একই বাণী উচ্চারণ করার ফলে মস্তিষ্কে ভালো থাকার তরঙ্গ তৈরি হয়। ভালো থাকার বিশ্বাস মনে ভালো থাকার আকুতি সৃষ্টি করে। নিউরো সাইন্টিস্টরা দীর্ঘ গবেষণা করে দেখেছেন, মস্তিষ্কে যখন কোনো নতুন তথ্য যায়, তখন একটি নিউরোন থেকে আরেকটি নিউরোনে নতুন সংযোগ পথ তৈরি হয় এবং মস্তিষ্কের কর্ম কাঠামো বদলে যায়। তখন নতুন বাস্তবতা সৃষ্টিতে মস্তিষ্ক কাজে লেগে যায়। সচেতন মনে বা অবচেতন মনে আমরা যা চিন্তা করি বা মস্তিষ্কে কমান্ড করি তারই বাস্তবতা আমাদের চারপাশে সৃষ্টি হয়। যে কারণে পারিপার্শ্বিক পরিবেশে নিজেরাই নিজেকে অযোগ্য করে তুলি। সারাদিন পোড়া কপাল ভাবলে বা নিজেকে অবহেলিত ও অযোগ্য ভাবলে যার কাছে গেলে অবহেলিত হবেন মূল্যায়িত হবেন না ,অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন তার কাছেই পৌঁছাতে মস্তিষ্ক কাজ শুরু করে দেবে। নিজেকে সফল সুস্থ ও প্রশান্ত রাখার জন্য তাই অটোসাজেন হচ্ছে এক অব্যর্থ প্রক্রিয়া। যখন আপনি মস্তিষ্কে ভালো থাকার প্রোগ্রাম দিবেন, মস্তিষ্কই তখন আপনাকে আইডিয়া দেবে কিভাবে কাজ করলে আপনি সফল হবেন, প্রশান্ত থাকতে পারবেন সুখী হবেন। মনোবিজ্ঞানীরা এ সূত্রটিকেই ব্যবহার করেছেন কখনো অটোসাজেশনে আবার কখনো মনছবিতে। শুধু রোগ-ব্যাধি নয়, জীবনের এমন কোনো দিক নেই যেখানে অটোসাজেশন চর্চায় বদলের হাওয়া লাগে নি।


১. ঘুম ভাঙতেই বলবো,  শোকর আলহামদুলিল্লাহ/ থ্যাঙ্কস গড/ প্রভু ধন্যবাদ! একটি নতুন দিনের জন্যে।
২. আমি জানি, "রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন"। রাগ নিয়ন্ত্রণে রেখে আমি সবসময় জয়ী হবো।
৩. বিশ্বাস শক্তির আকর। আমি বিশ্বাসী। বিশ্বাসের শক্তি আমার সাফল্যকে নিশ্চিত করবে।
৪. অন্যের দোষ সহজেই খুজেঁ পাওয়া যায়, নিজের দোষ খুজেঁ পাওয়াটা খুব কষ্টকর। আমি এই কষ্টকর কাজটিই আজ করবো।
৫. আমি সবসময় হাসিমুখে কথা বলবো। যে যা-ই বলুক- সবসময় প্রো-অ্যাকটিভ থাকবো।
৬. কর্ম ছাড়া প্রার্থনা কবুল হয় না। তাই প্রার্থনার পাশাপাশি আমি কাজের প্রতিও গুরুত্ব দেবো।
৭. জন্ম বা বংশ নয়, কর্মই মানুষকে মহান করে। সৎকর্মে নিবেদিত হয়ে আমিও মহান হবো।
৮. সভ্যতার সবকিছু মানুষের সৃষ্টি। আমিও মানুষ। আমারও রয়েছে বিশাল সম্ভাবনা। আমি সম্ভাবনাকে কাজে লাগাবো।
৯. নরকে যাওয়ার প্রধান রাজপথ আলস্য। তাই আমি পরিকল্পিত কর্মব্যস্ত জীবনযাপন করবো।
১০. সুস্থ দেহ, প্রশান্ত মন, কর্মব্যস্ত, সুখী-জীবন।
সবটুকু একত্রে পড়ুন "সুখী জীবনের জন্য- অটোসাজেশন"
Posted in by Akashnill. No Comments