সুখী জীবনের জন্য- অটোসাজেশন


বারবার উচ্চারিত ইতিবাচক শব্দের প্রভাব সম্পর্কে সাধকেরা সচেতন ছিলেন আদিকাল থেকেই। নবীজী (স.) বলেছেন কারো সাথে দেখা হলে সালাম বিনিময়ের পর কুশল জিজ্ঞেস করলে বলবে, “শোকর আলহামদুলিল্লাহ বেশ ভালো আছি”। তিনি এটা কেন বলেছিলেন, বললে কী লাভ হবে, কেন বলবো তা আমরা হাজার বছর ধরেও বুঝি নি। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রথম সারির বেশ কয়েকজন চিকিৎসকের এ বিষয়ের গবেষণা ও প্রয়োগ প্রক্রিয়া তাক লাগিয়ে দেয় পুরো বিশ্বকে। এমনই একজন ফরাসী মনোবিজ্ঞানী ডা. এমিল কোয়ে। ১৯১০ সাল থেকে তিনি শুরু করলেন নিরাময়ের ক্ষেত্রে অটোসাজেশন চর্চার গুরুত্ব নিয়ে গবেষণা। কোনো প্রকার ওষুধ ছাড়াই শুরু করেন বিভিন্ন ধরনের মনোদৈহিক রোগের চিকিৎসা। তার ক্লিনিকে আসা রোগীদেরকে সকাল-বিকাল একাগ্র মনোযোগ দিয়ে একটি অটোসাজেশন বলতে হতো, ‘ডে বাই ডে ইন এভরি ওয়ে আই এম গেটিং বেটার এন্ড বেটার’। এভাবেই সকাল-বিকাল বিশ বার চর্চা করে হাজার হাজার রোগী মাইগ্রেন, মাথাব্যাথা, বাতব্যাথা, প্যারালাইসিস, তোতলামি, গ্যাস্ট্রিক, আলসার, অনিদ্রা এমনকি টিউমার পর্যন্ত ভালো হয়ে গেল। বাংলাদেশেও প্রফেসর এম ইউ আহমেদ প্রবর্তিত মেডিস্টিক সাইকো থেরাপি প্রক্রিয়ায় একইভাবে হাজার হাজার রোগী বিভিন্ন ধরনের জটিল ব্যাধি থেকে মুক্ত হয়েছেন।
ইতিবাচক এ অটোসাজেশনের শক্তির মূল রহস্য কোথায় ?
মনোবিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন যে আমাদের মন বা নার্ভাস সিস্টেম বাস্তবতা ও কল্পনার মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না। তাই নাটক বা সিনেমায় কোনো হাসির জিনিস দেখলে যেমন চোখে মুখে হাসির রেশ ফুটে ওঠে, তেমনি কোনো বিরহ বা বিচ্ছেদের ঘটনা দেখলে মন খারাপ হয়ে যায়। অথচ আমরা জানি এর পুরোটাই অভিনয়। তার পরেও উত্তেজনা ও বিষাদের রেশ আমাদের মনের ভেতর অনেকক্ষণ থাকে। বাস্তবেও যখন আমরা কখনো এরকম কোনো ইতিবাচক বা নেতিবাচক শব্দ উচ্চারণ করি তার প্রভাব আমাদের দেহে মনে অনুভব করি। কারণ বারবার ভালো থাকার একই বাণী উচ্চারণ করার ফলে মস্তিষ্কে ভালো থাকার তরঙ্গ তৈরি হয়। ভালো থাকার বিশ্বাস মনে ভালো থাকার আকুতি সৃষ্টি করে। নিউরো সাইন্টিস্টরা দীর্ঘ গবেষণা করে দেখেছেন, মস্তিষ্কে যখন কোনো নতুন তথ্য যায়, তখন একটি নিউরোন থেকে আরেকটি নিউরোনে নতুন সংযোগ পথ তৈরি হয় এবং মস্তিষ্কের কর্ম কাঠামো বদলে যায়। তখন নতুন বাস্তবতা সৃষ্টিতে মস্তিষ্ক কাজে লেগে যায়। সচেতন মনে বা অবচেতন মনে আমরা যা চিন্তা করি বা মস্তিষ্কে কমান্ড করি তারই বাস্তবতা আমাদের চারপাশে সৃষ্টি হয়। যে কারণে পারিপার্শ্বিক পরিবেশে নিজেরাই নিজেকে অযোগ্য করে তুলি। সারাদিন পোড়া কপাল ভাবলে বা নিজেকে অবহেলিত ও অযোগ্য ভাবলে যার কাছে গেলে অবহেলিত হবেন মূল্যায়িত হবেন না ,অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন তার কাছেই পৌঁছাতে মস্তিষ্ক কাজ শুরু করে দেবে। নিজেকে সফল সুস্থ ও প্রশান্ত রাখার জন্য তাই অটোসাজেন হচ্ছে এক অব্যর্থ প্রক্রিয়া। যখন আপনি মস্তিষ্কে ভালো থাকার প্রোগ্রাম দিবেন, মস্তিষ্কই তখন আপনাকে আইডিয়া দেবে কিভাবে কাজ করলে আপনি সফল হবেন, প্রশান্ত থাকতে পারবেন সুখী হবেন। মনোবিজ্ঞানীরা এ সূত্রটিকেই ব্যবহার করেছেন কখনো অটোসাজেশনে আবার কখনো মনছবিতে। শুধু রোগ-ব্যাধি নয়, জীবনের এমন কোনো দিক নেই যেখানে অটোসাজেশন চর্চায় বদলের হাওয়া লাগে নি।


১. ঘুম ভাঙতেই বলবো,  শোকর আলহামদুলিল্লাহ/ থ্যাঙ্কস গড/ প্রভু ধন্যবাদ! একটি নতুন দিনের জন্যে।
২. আমি জানি, "রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন"। রাগ নিয়ন্ত্রণে রেখে আমি সবসময় জয়ী হবো।
৩. বিশ্বাস শক্তির আকর। আমি বিশ্বাসী। বিশ্বাসের শক্তি আমার সাফল্যকে নিশ্চিত করবে।
৪. অন্যের দোষ সহজেই খুজেঁ পাওয়া যায়, নিজের দোষ খুজেঁ পাওয়াটা খুব কষ্টকর। আমি এই কষ্টকর কাজটিই আজ করবো।
৫. আমি সবসময় হাসিমুখে কথা বলবো। যে যা-ই বলুক- সবসময় প্রো-অ্যাকটিভ থাকবো।
৬. কর্ম ছাড়া প্রার্থনা কবুল হয় না। তাই প্রার্থনার পাশাপাশি আমি কাজের প্রতিও গুরুত্ব দেবো।
৭. জন্ম বা বংশ নয়, কর্মই মানুষকে মহান করে। সৎকর্মে নিবেদিত হয়ে আমিও মহান হবো।
৮. সভ্যতার সবকিছু মানুষের সৃষ্টি। আমিও মানুষ। আমারও রয়েছে বিশাল সম্ভাবনা। আমি সম্ভাবনাকে কাজে লাগাবো।
৯. নরকে যাওয়ার প্রধান রাজপথ আলস্য। তাই আমি পরিকল্পিত কর্মব্যস্ত জীবনযাপন করবো।
১০. সুস্থ দেহ, প্রশান্ত মন, কর্মব্যস্ত, সুখী-জীবন।
Posted in by Akashnill. No Comments
Leave a Comment