হজরত মুহাম্মদ (সা•)-এর শৈশবের দিনগুলো

সবাইকে পবিএ মাহে রামাজানের মোবারক বাদ
সন্মানিত পাঠক বৃন্দ অনেক আগের সংরক্ষিত এই লেখাটা আপনাদের কাছে শেয়ার করলাম। যদি কারো ভালো লাগে ভাব বেন সেটা আল্লাহর রহমত আপনার জন্য। আর না লাগলে আমার কিংবা লেখক সাহেবের ব্যার্থতা বলে মনে করবেন।

রবিউল আউয়াল মাস। চারদিকে আনন্দের প্লাবন। ভোরের সূর্যের আলোর সঙ্গে অন্ধকার পৃথিবীর বুকে নেমে এলো এক মানব শিশু। যে শিশুর মুখ দেখে চমকে ওঠে তৎকালীন সমাজের স্বার্থবাদীরা। তারা বুঝতে পারেন কুরাইশ বংশের এই শিশু যে সত্যি আলোর ঝলকানি। তা না হলে আজ মক্কার বুকে এতো সুবাস কেনো?
ধূ ধূ মরুর চর মক্কার ঘরে ফুটলো এক মনলোভা লাল গোলাপ। সেই ফুলের সুবাসে মেতে ওঠে আকাশ, বাতাস, গাছপালা, তরুলতা। গাছের ডালে ডালে পাখিরা গান গায়। ক্ষণিকের জন্য সমস্ত পৃথিবী থমকে দাঁড়ায়। মক্কাবাসীরা দেখতে পেলো পুণ্যবতী মা আমিনার কোল উজ্জ্বল করে বসে আছেন সেই চিরবাঞ্চিত আলোক শিশু মুহাম্মদ (সাঃ) যিনি ব্যথিত বঞ্চিত মানুষের ধ্যানের ছবি। কুটিল সমাজের ব্যথিতজনের আশ্রয়স্থল হয়েই যেনো আল্লাহর পিয়ারে বান্দা হাজির হয়েছেন।
মুহাম্মদ (সাঃ) জন্মের আগেই হারিয়েছেন পিতাকে। মায়ের কোলে পিতৃহারা শিশু। আহ কি প্রাণহারা দীপ্তি। কতো নির্মল মাধুরীময় দেখাচ্ছে। তার রূপের কাছে সবকিছুই যেনো ম্স্নান। কে এ শিশু? মা আমিনা শিশু মুহাম্মদ (সাঃ)- কে বুকে জড়িয়ে নিতেই তার বুক চিরে কান্না বেরিয়ে আসে। কারণ এ সময়ে সারা আরব জাহানেই চলছে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। মানুষ মানুষের ওপর জবরদস্তি। এক গোত্র আরেক গোত্রের ওপর আক্রমণ করছে। কে কার সম্পদ লুটে নেয় তার হিসেব নেই। মায়ের চিন্তা আমারঃ । কিন্তু সৃষ্টিকর্তা ভাবেন অন্য কিছু।

বিশ্বস্রষ্টা আল্লাহ তায়ালা জানেন এ শিশুই একদিন পৃথিবীর মানব সমাজ, মানুষে মানুষে সৌহার্দ, সৃষ্টিকর্তার আরাধনা বাদ দিয়ে যারা শত্রুতা, হালাল হারাম, ভালো মন্দ বাছবিচার না করে দুনিয়ার মায়াজালে আটকে আছেন তাদেরকে এক আল্লাহর অনুগামী করে সমাজ ও ধর্ম কর্মের পথে এনে শুধু মানুষের কল্যাণকর চির সুন্দর ও সৃষ্টিকর্তার নির্দেশিত সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করবেন।
মুহাম্মদ (সাঃ) জন্মের আগে থেকেই আরব জুড়ে মহা দুর্ভিক্ষ চলছে। পুরো মক্কা নগরীর মানুষ অতি কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। হালিমা বিবিও খুব গরীব। তাই জীবন ধারণের জন্য স্বামী ও সন্তানেরা মাঠে মাঠে গিয়ে ঘাস সংগ্রহ করে তা সামান্য মূল্যে বিক্রি করে কোনো রকমে পরিবার-পরিজন নিয়ে চলেন। এভাবেই দিন চলছিলো। হালিমা বিবি মনে মনে স্থির করলেন, মক্কা নগরীতে দুধ মাতাদের কদর আছে। ওখানে গেলে হয়তো একটি সন্তান লালন পালনের জন্য পাওয়া যাবে। তাতে নিজের সংসারে কিছু আয় বাড়বে। এ সময় আরবদের মাঝে রেওয়াজ ছিলো শিশুদের দুধ মাতাদের কাছেই লালন পালন করতে দেওয়া। তাই হালিমা বিবি নিজের শিশু পুত্রকে বুকে নিয়ে একটি সাদা গাধার পিঠে চড়ে বসলেন। তার স্বামী বসলেন একটি উটের পিঠে। উটটি দুধেল হয়েও দুধ দিচ্ছিলো না। ক্ষুধার জ্বালায় কোলের শিশু পুত্র অঝোরে কাঁদছিলো। কিন্তু মায়ের বুকে দুধও নেই। ধূ ধূ বালুর বুকে কে দিবে শিশুর মুখে একটু দুধ? সঙ্গী-সাথীরাও একটু এগিয়ে আসলো না। রাত দিন পথ চলতে চলতে সবাই ক্লান্ত। কারো চোখে ঘুম নেই। পানির পিয়াসে সবার প্রাণ ওষ্ঠাগত। ক্ষুধার জ্বালায় গতর দুর্বল। তবু কেউ থেমে নেই। সবাই একটু স্বাচ্ছন্দ্যের আসায় মক্কায় উপস্থিত হয়ে তাঁবু পাতলো।
মক্কা নগরীতে দুধ শিশুর খোঁজে আসা অনেক মহিলাকে দেখতে পেয়ে দাদা আবদুল মোতালেব তাদের সবাইকে মুহাম্মদ (সাঃ) কে গ্রহণ করার অনুরোধ জানালেন। আবদুল মোতালেবের প্রস্তাব পেয়ে অনেকেই আগ্রহী হলো বটে; কিন্তু যখন জানতে পারলো শিশু মুহাম্মদ (সাঃ)-এর পিতা নেই তখন একে একে সবাই পিছিয়ে যেতে থাকলো। কারণ তারা জানতো শিশুর পিতারাই শিশুর লালন পালনের জন্য মোটা অংকের পারিতোষিক দিতে পারে। কিন্তু মা আর দাদা কতোটুকুইবা দিতে পারবে? কয়েক দিনের মধ্যেই দুধ শিশু নিতে আসা সব মহিলাই তাদের কোলে তুলে নিয়েছে একজন করে শিশু। কিন্তু হালিমা বিবি কোথাও একজন শিশু সংগ্রহ করতে পারলেন না। এতোদূর এসে খালি হাতে ফিরে যাবে তা কি হয়। হালিমা বিবি স্বামীকে বললেন, ‘খোদার কসম, ওদের সাথে আমার খালি হাতে ফিরে যেতে মন চাইছে না। কাজেই আমি ওই এয়াতিম শিশুর কাছে যাবো এবং ওই শিশুকেই নিবো।’

কুরাইশ গোত্র আবদুল মোতালেবের সামনে হাজির হলেন। হালিমা বিবিকে পেয়ে আবদুল মোতালেব মনস্থির করলেন তাঁর শিশু নাতি মুহাম্মদ (সাঃ)-কে হালিমা বিবির কোলেই তুলে দিবেন। কিন্তু মা আমিনা কি বলেন? তাই হালিমা বিবি মা আমিনার ঘরে এসে মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে কথাবার্তা বলতে লাগলেন। তাঁরা যখন কথা বলছেন তখন শিশু মুহাম্মদ (সাঃ) বিছানায় ঘুমিয়ে ছিলেন। হালিমা বিবি মনে মনে ভাবলেন, আমি যাকে লালন-পালন করবো তাকে একটু দেখে নেই। একথা ভেবেই তিনি ঘুমন্ত শিশুর বিছানার পাশে গিয়ে বসলেন এবং শিশুকে দেখামাত্র তাঁর একটি হাত অবলীলায় শিশুর কচি শরীরে চলে গেলো আপন গতিতে।

আশ্চর্য হলেও সত্যি; হালিমা বিবি হাত রাখতেই শিশু মুহাম্মদ (সাঃ) ঘুম ভেঙে জেগে উঠলেন। কিন্তু তাঁর মুখে হাসির ফোয়ারা বয়ে যাচ্ছে। শিশুর মনে হালিমা বিবি যেনো তাঁর আপনজন। হালিমা বিবি মনে মনে খুশি হলেন। মা আমিনা পুত্রের চেহারা ও হালিমা বিবির মনের ভাব বুঝতে পেরে নিজ পুত্রকে আপন বুকে জড়িয়ে নিয়ে আদর সোহাগে ভরে দিলেন। তারপর কান্নাজড়িত কণ্ঠে পুত্রকে হালিমার কোলে দিয়ে তাঁর ভালোমন্দ সব দায়িত্ব বুঝিয়ে দিলেন। শিশু মুহাম্মদ (সাঃ)- কে পেয়ে হালিমা বিবির বুক যেনো ভরে ওঠলো। তিনি কালবিলম্ব না করে শিশু মুহাম্মদ (সাঃ)-কে নিয়ে নিজের বাড়ির দিকে রওয়ানা হলেন।

যিনি জগত সৃষ্টি করেছেন তার রহস্য মানুষ কিভাবে বুঝবে? হালিমা বিবি আল্লাহর নূরে তৈরি মানুষের কান্ডারি শিশু মুহাম্মদ (সাঃ) কে সযত্নে নিজের বুকে জড়িয়ে নিতেই তার মরুবুকে দুধের জোয়ার নেমে এলো। এদিকে কুদরতের মহিমায় তাদের সঙ্গে থাকা দুধবিহীন উটের উলানে দুধের নহর বয়ে যেতে লাগলো। মায়ের বুকের দুধ পানে শিশু মুহাম্মদ (সাঃ) এবং দুধ ভাই দু’জনেই পেট ভরে পান করে ঘুমিয়ে গেছে। হালিমা বিবি ও স্বামী তারাও উটের দুধ দুইয়ে দুজনে তৃপ্তিসহ পান করলেন। তারা বুঝতে পারলেন এ শিশু অন্য শিশুদের মতো নয়। এ শিশু তাদের জন্য মহাকল্যাণময় বার্তা নিয়ে তাদের বুকে এসেছে।
হালিমার কষ্টের বুকে শান্তির পরশ। মক্কায় আসার পথে যে গাধাটি পথ চলতে হিমসিম খাচ্ছিলো। সঙ্গীসাথীদের অনেক পিছনে ঝিমতে ঝিমতে আসছিলো সেই গাধাটিই সবার পিছন থেকে দ্রুতগতিতে একদিন আগে আসা সবাইকে পিছনে ফেলে যাচ্ছিলো দেখে কাফিলার লোকজন বলতে লাগলো, হে হালিমা একটু দাঁড়াও। তারা আরো বললো, হালিমা, এটা কি তোমার সেই গাধা নয়, যেটার পিঠে চড়ে তুমি মক্কায় এসেছিলে?

হালিমা বিবি তাদের প্রশ্নে বললেন, হ্যাঁ সেই গাধাটিই আমাকে বহন করে নিয়ে যাচ্ছে। বিস্ময়ভরা দৃষ্টি নিয়ে তারা সমস্বরে বললো, খোদার কসম, হালিমা তোমার গাধাটার অবস্থাই অনেক পাল্টে গেছে।
দিগন্ত বিস্তৃত মরুভূমি। শো শো বাতাস বয়ে যায় জীর্ণ কুটিরের ওপর দিয়ে। মাঝে মাঝে কিছু জমি সবুজ ঘাসে আচ্ছাদিত। ওখানে মেষ পাল আর উটের বহর ঘুরে বেড়ায়। শিশু মুহাম্মদ (সাঃ) হালিমা বিবির কুটিরে আসার পর থেকে তাঁর অলস ছেলে মেয়েরা খুশি হয়ে মেষ পাল চড়াতে মাঠে যায়। তাদে মনে আনন্দ বেড়ে যায়। তাঁরাও দুধ ভাইকে আপন ভাই বলে স্নেহ করতে লাগলো। তাদের মাঝে কে আগে স্নেহ করবে এই নিয়ে লেগে যায় প্রতিযোগিতা। এদিকে ভাইয়ের জন্য তাদের কর্মচঞ্চলতা বেড়ে যায়। তারা কেউ মেষ নিয়ে মাঠে যায়। কেউ কেউ সবুজ ঘাস কেটে এনে বিক্রি করে সামান্য মুদ্রার বিনিময়ে। কিন্তু সামান্য মুদ্রা পেলেও হালিমা বিবির সংসারে ক্রমেই উন্নতি হতে লাগলো।

পূর্ব দিগন্তে ভোরের রক্তিম আলো ঝলমল। দুপুর বেলা ভেসে আসে তপ্তময় ঝাঁজালো বাতাস। বাতাসের সঙ্গে ঘুরে বেড়ায় চকমকে দানাদার বালুকণা। প্রতিদিনই হালিমা বিবির ছেলে মেয়েরা মেষ নিয়ে মাঠে যায়। তাদের সঙ্গে শিশু মুহাম্মদ (সাঃ)ও যেতে বায়না ধরেন। কিন্তু তারা তাকে নিতে নারাজ। অবশেষে একদিন হালিমা বিবি মাঠে যেতে অনুমতি দিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছেন একে আর ঘরে আটকে রাখা যাবে না। তাই তিনি আল্লাহকে স্মরণ করে শিশু মুহাম্মদ (সাঃ) কে অনুমতি দিলেন।

শিশু মুহাম্মদ (সাঃ) প্রকৃতির পাঠশালায় এসে দেখতে পেলেন, আহ্‌ কি সুন্দর চারণভূমি! চারণভূমির অদূরেই বিশাল বিশাল পর্বতমালা। পর্বতমালার ওপর ভেসে বেড়াচ্ছে নীল আকাশ। তার পাদদেশেই রয়েছে ফুল আর ফলে ভরা সবুজ বাগান। বাগানের গা ঘেঁষে বয়ে চলেছে স্বচ্ছ পানির ধারা। গাছে গাছে বসে থাকা নানা পাখির কণ্ঠে মিষ্টি মধুর সুর। পাখির সুরে ভরে ওঠে প্রাণ। অপূর্ব সে এক প্রাকৃতিক পরিবেশ। ভাবতে থাকেন কে এই সৃষ্টির মালিক?
শিশু মুহাম্মদ (সাঃ) মেষ চরাতে এসে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যান। শুনতে পান অদৃশ্য কারো বাণী। তাই অসীম চিন্তায় মগ্ন হয়ে পড়েন তিনি।

শিশু মুহাম্মদ (সাঃ) মুক্ত আকাশের নিচে আসলেও তিনি অন্য ছেলেমেয়েদের মতো ছুটোছুটি করেন না। তিনি আকাশ, বাতাস, জীবজন্তু, পাহাড় পর্বত, সৃষ্টির রহস্য নিয়ে ভাবতে ভালোবাসেন। তাইতো সমসময় তাঁর মন ভাবগম্ভীর থাকে। শিশু মুহাম্মদ (সাঃ) আপন মনে সৃষ্টির রহস্য দেখছেন। তিনি দেখতে পেলেন বেদুঈনদের জীবনযাত্রার মধ্যে কোনো কৃত্রিমতা নেই। তাদের জীবন প্রকৃতির মতোই গড়ে ওঠে। মরুর বুকের বেদুঈন জীবনের সঙ্গে থেকে মানুষের প্রকৃত স্বাধীনতা কাকে বলে তা সঞ্চারিত হচ্ছে। স্বদেশ প্রেম কাকে বলে তা উপলব্ধি করেন । তিনি বুঝতে পারেন শান্ত, সুসংহত, সংযমী জীবনের বিকল্প নেই।

শিশু মুহাম্মদ (সাঃ) শিশু বেলায়ই তাঁর মিষ্টি কথায় মিষ্টি আচরণ দিয়ে বেদুঈন ছেলেমেয়েদের মনে গেঁথে যান। তাইতো তারা শ্রেষ্ঠ মানবশিশুকে সম্মান দিয়ে করেন মেষ পালকদের দলপতি। শিশু কালের শিক্ষাই মানব জীবনে সর্বাপেক্ষা উজ্জ্বল হয়ে থাকে। শিশু মুহাম্মদ (সাঃ)- এর শিক্ষা এমন স্থান হতে সংগৃহীত হচ্ছে যার বৈচিত্র্যের ভাণ্ডার কেউ দেখতে পায় না। তিনি তিল তিল করে সৃষ্টিকর্তার শিক্ষায় দীক্ষিত হচ্ছেন। আল্লাহ যাকে করবেন জগতবাসীর পথ প্রদর্শক তাকে তো আর সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারেন না। একদিন মাঠে গিয়ে শিশু মুহাম্মদ (সাঃ) হারিয়ে যান। দুধ মাতা হালিমা পাগলের ন্যায় খোঁজাখুঁজি করে বেড়াচ্ছেন। তাঁর দু’চোখ বেয়ে পানি পড়ছে, তাকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছেন না। এখন কি হবে, কোথায় পাবে পরের ধনকে? তিনি অনেক জায়গায় খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে তাঁকে পেলেন একটি গাছের নিচে। কিন্তু একি! আমার নয়নের মণি এভাবে গাছের নিচে পড়ে আছে কেনো? হালিমা বিবি তাড়াতাড়ি মুহাম্মদ (সাঃ) কে কোলে তুলে নিলেন।
হালিমা বিবি অবাক হলেন। তিনি বুঝতে পারছেন আমার মুহাম্মদ (সাঃ) কোনো সাধারণ মানুষ নয়। একে সবসময় নজরে নজরে রাখতে হবে। মনে মনে বললেন, আমিনা, ওগো আমিনা, তোমার নয়নকে পেয়ে আমি ধন্য। মদীনাবাসীর সৌভাগ্য মুহাম্মদের মতো একজন মহামানব লালন পালন হচ্ছে তাদের ঘরে। শিশু মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর আহবানে ঘন ঘন সাড়া দিয়ে শুনছেন•• কোন সে সুগভীর বাণী••? তাঁর মনে হতো কে যেনো বহু দূর থেকে ডাকছেন। এদিকে স্নেহময়ী গর্ভধারিণী মা আমিনা তাঁর শিশু পুত্রকে কাছে পাবার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছেন। তাঁর মনে কতো প্রশ্ন জাগছে, তাঁর আদরের দুলাল মানবকুলের শিরোমনি শিশু নবীকে কতোদিন যেনো দেখেন না। পুত্রের জন্য মায়ের মন উতলা হয়ে ওঠে।

দিন যায়। মাস যায়। দুধ মা হালিমা বিবির কাছে কেটে গেলো কয়েকটি বছর। শিশু মুহাম্মদ (সাঃ) বেড়ে উঠছেন তরতর করে। মা হালিমা তাঁকে ছাড়া কিছুই বুঝেন না। তিনি বুঝতে পেরেছেন এ শিশুই একদিন হবে বিশ্ব ভূখণ্ডের জ্যোতিষ্ক। একে জীবনভর কাছে রাখতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু সময়ের দাবী অনুযায়ী তাঁর গর্ভধারিণীর কাছে ফিরিয়ে দিতে হলো। একদিন মা আমিনা আবার ফিরে পেলেন তাঁর নয়নের মণিকে। কোলে তুলে নিয়ে চুমুতে চুমুতে ভরে দিলেন। মায়ের মনে আনন্দের সীমা নেই। কিন্তু যিনি আল্লাহর প্রেমের আলোক সম্বল করে এসেছেন জঞ্জালময় পৃথিবীতে তিনি কি শুধু মায়ের কোলে বসে থাকতে পারেন?

**************************
মো হা ম্ম দ স ফি উ দ্দি ন
দৈনিক ইত্তেফাক, ২০-০৬-২০০৮
Leave a Comment