মহানবীর (দঃ) নিবার্চিত বাণী-2


ইসলাম হইল আল্লাহ ব্যতিত কোন প্রভু নেই এবং মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর রাসুল বলে সাক্ষ্য দেওয়া, নামায কায়েম করা, যাকাত আদায় করা, রমযানের রোজা রাখা এবং সামর্থ থাকলে কাবা শরীফে হজ্জ করা। (বোখারী শরীফ , মুসলিম শরীফ)
হযরত জাবের (রাঃ) বলেন , একদিন আমি জিজ্ঞাসা করলাম-ইয়া রাসুলুল্লাহ (দঃ)! সকল বস্তু সৃষ্টির পূর্বে আল্লাহ্‌পাক কোন বস্তু সৃষ্টি করেছিলেন ? মহানবী (দঃ) বললেন, হে জাবের ! সবকিছু সৃষ্টির পূর্বে আল্লাহ্‌পাক নিজের নুর হতে তোমার নবীর নুরকে সৃষ্টি করেছিলেন । অতঃপর সেই নুর আল্লাহ্ পাকের ইচছা অনুসারে বিচরণ করতে ছিল। সেই সময় লাওহে মাহফুজ, কলম, জান্নাত, জাহান্নাম, ফেরেশতা, আসমান, জমীন, চন্দ্র, সূর্য, জ্বীন ও মানুষ কিছুই ছিল না । ছিলেন কেবল আল্লাহ্ পাক এবং নুরে মোহাম্মদী (দঃ) আল্লাহর নির্দেশে ভ্রমণরত ছিলেন । আল হাদীস
তোমাদের মধ্যকার যে ব্যক্তি সেহ্‌রী খাওয়া বর্জন করবে, তার স্বভাব ইহুদীদের মতো হয়ে যাবে। কমপক্ষে দুএক লোকমা হলেও সেহরী খাবে। কেননা এতেও অসংখ্য সওয়াব লাভ হবে। আল হাদীস
না, ইহার ব্যতিক্রম হতে পারে না । তোমাদেরকে অবশ্যই সৎকর্মের আদেশ দিতে হবে, তোমাদের অবশ্যই অন্যায় কাজে বাধা দিতে হবে। অবশ্যই অনাচারীদের দুহাত চেপে ধরতে হবে। অন্যায়কারীদেরকে অবশ্যই ন্যায়ের পথে চলতে বাধ্য করতে হবে। অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের উভয়ের অন্তকরণ অভিন্ন করে দিবেন । অতঃপর তোমাদের পরিণত করবেন অভিশপ্ত জাতিতে, যেভাবে তিনি ইহুদীদের পরিণত করেছেন অভিশপ্ত জাতিতে। আল হাদীস
যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের অনুপসিতিতে তার মান-ইজ্জত রক্ষা করল, তার দোষ ঢেকে রাখল; আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচিয়ে দেবেন । আল হাদীস (মুসনাদে আহমদ)
তোমরা অন্যের দোষ অন্বেষণ করো না, গুপ্তচরবৃত্তি করো না, পরস্পর কলহ করো না, হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করো না, একে অপরকে ঘৃণা করো না, অন্যের ক্ষতিসাধনের ফন্দি করো না বরং আল্লাহর প্রকৃত বান্দা এবং পরস্পর ভাই ভাই হয়ে যাও । (বোখারী, মুসলিম)
আমি তোমাদেরকে কবরের নিকট যেতে নিষেধ করেছিলাম । আচছা এখন থেকে তোমরা কবরের নিকট যেও । কেননা এতে অন্তর নরম হয়, চক্ষু অশ্রুপূর্ণ হয়, পরকালকে স্মরণ করায় এবং বাজে কথা থেকে বিরত রাখে। আল হাদীস
পরনিন্দা করা ব্যভিচার চাইতেও মারাত্মক। আল হাদীস
যে ব্যক্তি রমযানের শেষ দশ দিন এতেকাফ করবে, তাকে দুই হজ্জ এবং দুই ওমরার সওয়াব দেওয়া হবে। আল হাদীস (বায়হাকী শরীফ ‍ঃ)
ইসলামে বৈরাগ্যের কোনো স্থান নেই । আল হাদীস
নবী করীম (দঃ) কখনও কখনও শিশুদের কান্নার আওয়াজ শুনলে নামায সংক্ষিপ্ত করে ফেলতেন এবং বলতেন , ‘আমি চাই না যে তার মায়ের কষ্ট হোক-(- আল হাদীস (বোখারী শরীফ ‍ঃ))
তুমি যা বললে তা যদি তার মধ্যে থেকে থাকে, তবেই তা হবে পরনিন্দা। আর তা যদি না-ই থাকে তবে তা হবে মিথ্যা অপবাদ। (আবু দাউদ , নাসাঈ)
আল্লাহ যাকে ধন-সম্পদ দিয়েছেন সে যদি তার যাকাত আদায় না করে, তবে কিয়ামতের দিন সেই ধন-সম্পদ একটি বিষধর অজগরের রূপ ধারণ করবে যার দুই চোখের ওপরে দুটি কালো ফোটা থাকবে এবং সেই অজগরকে তার গলায় পড়িয়ে দেওয়া হবে। সাপটি তার মুখের দুই পাশে ছোবল মারতে থাকবে আর বলবে আমিই তোমার সম্পদ , আমিই তোমার সঞ্চিত ধন । আল হাদীস
অপ্রয়োজনীয় বিষয়কে বর্জন করাই হলো ইসলামের সৌন্দর্য । আল হাদীস (তিরমিযী)
জনৈক বেদুঈন একবার রাসুলুল্লাহ (দঃ)-কে বললেন, আমাকে এমন আমলের কথা বলুন যাতে আমি জান্নাতে যেতে পারি। নবী করীম (দঃ) বললেন, তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না, ফরজ নামায আদায় করবে, ফরজ যাকাত প্রদান করবে এবং রমজানের রোজা পালন করবে। লোকটি বলল, সেই সত্ত্বার কসম যার হাতে আমার প্রাণ, আমি ইহার চাইতে একটু বেশীও করব না, একটু কমও করব না । বেদুঈন লোকটি চলে যাওয়ার সময় রাসুলুল্লাহ (দঃ) বললেন, কেউ যদি কোনো জান্নাতী লোক দেখতে চায়, সে যেন এই ব্যক্তিকে দেখে নেয় । -(- আল হাদীস (বোখারী শরীফ ‍ঃ))
উত্তম স্বভাব হলো পূণ্য আর পাপ হলো তাই যা তোমার মনকে সন্দেহের দোলায় ফেলে দেয় এবং যা লোকে জানুক তা তুমি পছন্দ কর না । আল হাদীস (মুসলিম শরীফ ‍ঃ)
ফেরেশতারা ঈমানদার বান্দার রূহ নিয়ে অন্যান্য ঈমানদার বান্দার রূহের নিকট পৌছলে সে সব রূহ আনন্দিত হন । দুনিয়ার জীবনে দুরদেশে বসবাসকারী আত্মীয়-স্বজনরা বেড়াতে আসলে মানুষ যেমন খুশী হয়, মোমিনদের রূহও তেমনি আনন্দিত হয়ে থাকে । এমনকি তার চাইতেও অধিক আনন্দিত হয়ে থাকে । তারা জিজ্ঞেস করে যে, অমুকের অবস্থা কি, অমুক কেমন আছ ? তাছাড়া ঈমানদারদের রূহ আগন্তুক রূহকে কিছুক্ষণ বিশ্রামের সময়ও দিয়ে থাকেন । কেননা নবাগত রূহ দুনিয়ায় ফেলে আসা আত্মীয়-স্বজনদের কথা ভেবে ব্যথিত হয়ে থাকে । পরে একে একে উত্তর দিয়ে থাকেন । যদি কারো সম্পর্কে বলা হয় যে, অমুক ইন্তেকাল করেছে, তখন ঈমানদারদের রূহ বলে যে, সে ইন্তেকাল করল অথচ আমাদের নিকট আসল না, নিশ্চয় তাকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। (নাসায়ী শরীফ)
তোমরা সহধর্মিনীদের প্রতি শুভাকাঙখী হও । -(নাসায়ী শরীফ)
যে ব্যক্তি রোগাক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে , সে শহীদ রূপে গণ্য হবে। আল হাদীস
মসজিদে নববীতে এক রাকাত নামায পঞ্চাশ হাজার রাকাত নামাযের চাইতে উত্তম । -(ইবনে মাজাহ শরীফ)
খারাপ কাজ হইতে দেখেও যদি লোকেরা তা প্রতিহত করতে চেষ্টা না করে, তবে তারা যেন আল্লাহর পক্ষ থেকে আপতিত শাস্তির অপেক্ষা করতে থাকে । আল হাদীস (ইবনে মাজাহ শরীফ ‍ঃ)
সমাজে যখন ব্যাপক হারে অনাচার চলতে থাকে এবং যাদের বাধা দেওয়ার ক্ষমতা আছে তারা যদি প্রতিবাদ না করে, তবে আল্লাহ সেখানে পাইকারী হারে গযব নাজিল করেন যার হাত থেকে ভাল-মন্দ কেউ নিস্তার পায় না । -আল হাদীস
আল্লাহ পাকের নিরানব্বইটি নাম রয়েছে । যে তা মুখস্ত করবে, সে নিশ্চয় বেহেশতে প্রবেশ করবে। আল হাদীস
সন্দেহযুক্ত বিষয়কে পরিত্যাগ করে সন্দেহমুক্ত বিষয়কে গ্রহন কর । আল হাদীস (নাসায়ী আহমদ)
হে লোকেরা ! তোমরা ধীরে-সুস্থে চল। কেননা উটকে দৌড়িয়ে নিয়ে যাওয়া কোন সওয়াবের কাজ নয় । আল হাদীস
আমার পূর্বেকার রাসুলগণ কেবল নিজের জাতির পথ প্রদর্শনের জন্য প্রেরিত হতেন, আর আমি প্রেরিত হয়েছি সমগ্র মানবজাতির জন্য । (আল হাদিস)
কাউকে খারাপ কাজ করতে দেখলে তাকে হাত দিয়ে বাঁধা দাও । তা না পারলে মুখে প্রতিবাদ কর। যদি তাও না পারো তবে অন্তর দিয়ে ঘৃণা কর । আর এটা হলো দুর্বলতম ঈমানের পরিচয় । (আল হাদিস)
আমার বান্দাদের স্বভাব কতই না বিচিত্র ! এরা পাপ করার পর আমার নিকট ক্ষমা চায়, আমি তাদেরকে ক্ষমা করে দেই । ক্ষমা পাবার পর এরা একই পাপ পুণরায় করে ফেলে এবং আমার নিকট ক্ষমা চায় । আমি আবারো তাদের ক্ষমা করে দেই । হতভাগারা গোনাহ করাও ছাড়তে পারে না আবার আমার করুণা থেকেও নিরাশ হয় না । হে ফেরেশতারা ! তোমরা সাক্ষী থাক, আমি তাদেরকে ক্ষমা করেই যাব । (হাদীসে কুদসী)
আমি শেষ নবী, আমার পরে আর কোনো নবী আসবে না । (আল হাদিস)
নবী করীম (দঃ)-এর নিকট এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, কোন্ মহিলা উত্তম ? তিনি বললেন, সেই নারী যার প্রতি তার স্বামী দৃষ্টিপাত করলে সে সন্তুষ্ট হয়, যে স্বামীর কথা মতো চলে, নিজের ব্যক্তিগত ব্যাপারে স্বামীর বিরুদ্ধাচরণ করে না এবং স্বামীর ইচছার বিরুদ্ধে তার সম্পদ খরচ করে না । আল হাদীস (মেশকাত শরীফ)
কেউ যদি আল্লাহর পুরস্কারের আশায় যাকাত আদায় করে, তবে তাকে পুরস্কৃত করা হবে। কিন্তু যে ব্যক্তি যাকাত দিতে অস্বীকার করবে তার কাছ থেকে জোর পূর্বক যাকাত আদায় করতে হবে এবং আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী তার অর্ধেক সম্পত্তিও নিয়ে নেওয়া হবে। (নাসাঈ শরীফ , বায়হাকী শরীফ ‍ঃ)
ঈমানের সত্তরটিরও অধিক শাখা রয়েছে যার শ্রেষ্টটি হলো এই সাক্ষ্য দেওয়া যে আল্লাহ ব্যতিত কোনো উপাস্য নেই এবং ক্ষুদ্রতমটি হলো রাস্তা হতে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা আর লজ্জাও ঈমানের একটি শাখা। আল হাদীস
উত্তম চরিত্রের পূর্ণতা বিধানের জন্যেই আমি প্রেরিত হয়েছি। আল হাদীস
তোমাদের কেহ পূর্ণ মোমিন হতে পারবে না যে পযর্ন্ত না আমি তার নিকট তার পিতা , তার সন্তান এবং অন্য সকল মানুষের চাইতে বেশী প্রিয় হই । (- আল হাদীস (বোখারী শরীফ ‍ঃ))
তিন শ্রেণীর মানুষের সাথে হাশরের দিন আল্লাহপাক কথা বলবেন না , তাদের কোন ডাকেই সাড়া দিবেন না , তাদের প্রতি করুণার দৃষ্টি দিবেন না এবং তাদেরকে কঠিন শাস্তি আস্বাদ করাবেন ঃ () বৃদ্ধ ব্যভিচারী () মিথ্যুক শাসক () অহঙ্কারী দরিদ্র ব্যক্তি । (আল হাদীস)
আল্লাহর ইচছা অনুযায়ী যথা সময়ে জান্নাত সৃষ্টি হয়েছে। নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলের বিস্তৃতির সমানুপাতে উহার প্রস্থ নির্ধারণ করা হয়েছে। দৈর্ঘ্য সমন্ধে কেহই অবগত নহে। কেয়ামতের পরে উহার বিস্তৃতি আরো বাড়ানো হবে যাতে জান্নাতবাসীগণ তাতে পরমানন্দে বসবাস করতে পারে। বেহেশতের দরজা থাকবে একশত যার একটি হতে অন্যটির দূরত্ব হবে পাঁচশত বছরের পথের সমান । তাতে কুলকুল রবে ঝর্ণা প্রবাহিত হবে। বেহেশতের কোন্ বৃক্ষটি এমন আছে যার কান্ডটি স্বর্ণ নির্মিত নয় ! জান্নাতের বৃক্ষসমূহের শাখা-প্রশাখা কখনও শুষ্ক হয় না কিংবা তার পত্রসমূহ কখনও ঝরে পড়ে না । বৃক্ষের ফলগুলি নাগালের মধ্যে ঝুলে থাকবে যাতে জান্নাতবাসীরা স্বচছন্দে খেতে পারে। তথায় থাকবে ডাগর নয়না পবিত্র রমণীরা (হুর)। আল্লাহ্ তাদেরকে স্বীয় নুর দ্বারা সৃষ্টি করেছেন । তারা ইয়াকুত ও মারজান তুল্য লাবণ্যময়ী সুন্দরী হবে। তারা স্বীয় স্বামী ভিন্ন অন্য কারো প্রতি দৃষ্টিপাত করবে না এবং স্বীয় স্বামী ভিন্ন অন্য কারো দ্বারা স্পর্শিত হবে না । তাদের সাথে যতই সঙ্গম করা হবে ততই তাদেরকে নতুন এবং কুমারী মনে হবে। তাদের দেহে বিভিন্ন রঙের সত্তরটি অলংকার থাকবে এবং সেগুলি একটি পশমতুল্যও ভারি হবে না । তাদের কেশগুচছ হবে ইয়াকুত ও মুক্তা খচিত। -(আল হাদিস)

Leave a Comment